Thank you for trying Sticky AMP!!

অর্ধেক টাকা দেওয়ার শর্তে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় নাম

ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের আর্থিক সাহায্যের স্লিপ না পেয়ে উপস্থিত থেকেও তাঁরা সাহায্য পাননি। খালি হাতেই ফিরে গেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র লোকজন। গতকাল দেওয়ানগঞ্জের হাতীভাঙা ইউনিয়নের কাঠারবিল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। ছবি: প্রথম আলো

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শাহেদা বেগম। তাঁর স্বামী দিনমজুর। খেয়ে-না খেয়ে দিন চলে। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে দরিদ্র পরিবারটির। কয়েক সপ্তাহ আগে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ থেকে আর্থিক সাহায্যের তালিকায় তাঁর নাম ছিল। প্রথম দিকে নাম থাকায় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। গতকাল বুধবার সকালে তিনি ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কাঠারবিল উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে অন্য সবার মতো উপস্থিত হন সেই আর্থিক সাহায্যের জন্য। কিন্তু ভাগ্য খারাপ, পরিষদের কারোর সঙ্গে টাকার চুক্তি না করায় আর্থিক সাহায্য পাওয়ার চূড়ান্ত তালিকায় তাঁর নাম নেই। নাম না থাকায় তিনি পাগলের মতো লোকজনের কাছে ছুটেছেন। নামটি চূড়ান্ত তালিকায় ওঠানোর জন্য। কিন্তু তাঁর কথা কেউ শোনেননি।

শাহেদা বেগমের মতো এমন অবস্থা দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার হাতীভাঙা ইউনিয়নের বন্যার্ত দরিদ্র অনেক মানুষের। শাহেদা হাতীভাঙা ইউনিয়নের সবুজপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্বামীর নাম বিল্লাল হোসেন। বন্যায় এবার তাঁদের ঘরের সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের আর্থিক সাহায্য না পেয়ে দুপুরের পর খালি হাতে বাড়ি ফিরে যান শাহেদা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ উপজেলার হাতীভাঙা ইউনিয়নের ৬৪৮টিবন্যার্তপরিবারকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে এবং সাড়ে ৫ হাজার টাকা করে ৭২ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নগদ অর্থ রিলিফ দিয়েছে। বন্যার্ত পরিবারের তালিকা তৈরি নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের বিরুদ্ধে। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ বন্যার্ত অসচ্ছল দরিদ্র পরিবারের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেয় ইউনিয়ন পরিষদের কাছে। ইউপি সদস্যরা তাঁদের মতো করে এবং সাহায্যের অর্ধেক টাকা দেওয়ার শর্তে তালিকা তৈরি করেন। যেসব পরিবার অর্ধেক টাকা নিতে রাজি হয়েছে, তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর ইউপি সদস্যদের শর্তে যেসব পরিবার রাজি হয়নি, তারা অসচ্ছল হওয়ার পরও আর্থিক সাহায্য পায়নি।

এর আগে উপজেলার চরআমখাওয়া ও ডাংধরা ইউনিয়নেও এই সংস্থার রিলিফ বিতরণের অর্ধেক করে টাকা ইউপি সদস্যরা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।

গতকাল দুপুরে হাতীভাঙাইউনিয়নের কাঠারবিল উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, রিলিফ বিতরণের জন্য একটি প্যান্ডেল করা হয়েছে। বহু নারী-পুরুষ সেখানে বসে রয়েছেন। তাঁর আশপাশে আরও অনেক মানুষও বসে আছেন। কেউ কেউ গরমে গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। যেসব বন্যার্ত পরিবার রিলিফের স্লিপ পেয়েছে, তারাও আসছে আবার যারা পায়নি তারাও আসছে। অনেকেই নানা ধরনের অভিযোগ করছেন।

শারীরিক প্রতিবন্ধী নিরজরাত মাঠে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি খুবই দরিদ্র ঘরের। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের আর্থিক সাহায্য পাওয়ার জন্য পরিষদের ইউপি সদস্যসহ সবার কাছেই ধরনা দিয়েছেন। সবাই শুধু তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তিনি ইউপি সদস্যদের টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় স্লিপ পাননি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ইউনিয়নের আমি একজন সবচেয়ে দরিদ্র ঘরের প্রতিবন্ধী। তাহলে আমি কেন স্লিপ পেলাম না?’ তিনি অভিযোগ করেন, বেশির ভাগ স্লিপ পাওয়া ব্যক্তির সঙ্গে ইউপি সদস্যদের অর্ধেক টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তিতে তিনি ছিলেন না। এ কারণে তাঁর নামে স্লিপ হয়নি। তিনি ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধিকেও এ অভিযোগ করেন।

সবুজপুর গ্রামের জাহানারা বেগম বলেন, ‘বন্যায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা স্লিপ পাননি। যাঁরা মেম্বারদের মন জোগাতে পেরেছেন, শুধু তাঁরাই স্লিপ পেয়েছেন। আমরা সবচেয়ে দরিদ্র। কিন্তু আমরা স্লিপ পেলাম না।’

এভাবে কাঠারবিল গ্রামের হামেদ আলী, একই গ্রামের বিলকিছ পারভীন, সবুজপুর গ্রামের ফজল হক, কাঠারবিল গ্রামের শ্রীমতি কেসিয়া রানী, পূর্ব সবুজপুর গ্রামের সাহেরা খাতুনও একই অভিযোগ করেন।

হাতীভাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর সালাম বলেন, এই ইউনিয়নের পুরোটাই বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিল। প্রায় সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতিটি ওয়ার্ড ও গ্রামে গ্রামে মিটিং করে এ নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যাঁরা পাননি, তাঁরাই এ ধরনের অভিযোগ করছেন। তবে কিছু কিছু অনিয়ম হওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কিছু ইউপি সদস্য টাকা নেওয়ার শর্তে তালিকায় নাম দিয়েছেন। তবে তিনি সাহায্য দেওয়ার সময় সবাইকে বলে দিয়েছেন, কেউ যেন একটি টাকাও কাউকে না দেন। ভবিষ্যতে কেউ দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মাঠে কোনো ইউপি সদস্যকে পাওয়া যায়নি। পরে চেয়ারম্যানের কাছে ইউপি সদস্যদের ফোন নম্বর চাইলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান।