Thank you for trying Sticky AMP!!

আরডিএর সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সংস্থার উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শিগগির এ ঘটনায় মামলা করা হবে।

দুদক বলছে, রাজশাহী মহানগরী পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার ৮টি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো অ্যাজেন্ডা না থাকা সত্ত্বেও আরডিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিকল্পিতভাবে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে গোপনে সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখের মাধ্যমে ৮টি দরপত্র অনুমোদন করেন এবং দরপত্রদাতাদের অনুকূলে ৫০ দশমিক ৬৭ কাঠা জমি বরাদ্দ দেন। তাই অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।

দুদক সূত্র জানায়, আরডিএর ৮টি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দে ২০০৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পত্রিকাটির যেসব কপি বাজারে বিক্রির জন্য ছাড়া হয় সেগুলোতে প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তিটি নেই। তবে আরডিএর দরপত্র ফাইল থেকে জব্দ করা নথিপত্রে পত্রিকাটির যে কপি পাওয়া গেছে, তাতে বিজ্ঞপ্তিটি রয়েছে।

অনুসন্ধান সূত্র বলছে, একই দিনে পত্রিকাটির দুই ধরনের কপি প্রকাশ করা হয়েছে। প্লটের আবেদনসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিটি যাতে জনসাধারণ জানতে না পারেন, সে জন্য বাজারে ছাড়া কপিগুলোতে বিজ্ঞপ্তিটি ছাপানো হয়নি। অন্যদিকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচারসংক্রান্ত সরকারি বাধ্যবাধকতা পূরণে একই দিনে ও তারিখে সংশ্লিষ্ট পত্রিকাটির সীমিতসংখ্যক কিছু কপি পৃথকভাবে ছাপানো হয় যাতে বিজ্ঞপ্তিটি রয়েছে। অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে রাজশাহীর ওই পত্রিকাটির প্রকাশককে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রকাশক অনুসন্ধান দলকে জানিয়েছেন, পত্রিকাটির যে সংখ্যাটি বাজারে ছাড়া হয়েছিল সেটিই পত্রিকাটির আসল কপি। আরডিএর ফাইলে পত্রিকাটির যে কপিগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো তাদের ছাপানো পত্রিকা নয়। অথচ ওই পত্রিকা বিজ্ঞাপন ছাপানোর জন্য আরডিএ থেকে বিলের টাকাও নিয়েছিল।

সূত্র আরও জানায়, সরকারি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দের নিয়ম হলো, একটি স্থানীয় ও একটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক দরে সর্বোচ্চ দরদাতাকেই প্লট দিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৮টি বাণিজ্যিক প্লটের জন্য মাত্র ৮টি আবেদন জমা পড়ে। আবেদনকারীরা যে দর উল্লেখ করেছেন, সেই দরেই তাদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একটি প্লটের জন্য মাত্র একটি আবেদন পড়ায় নিয়মানুযায়ী পুনঃ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা উচিত ছিল, যা এখানে করা হয়নি।

সূত্রমতে, এটি একটি সুপরিকল্পিত দুর্নীতি। ২০০৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্লটের আবেদন গ্রহণের শেষ দিন ছিল। আর ২০০৬ সালের ২ জানুয়ারি তড়িঘড়ি করে সাধারণ সভা ডেকে কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই ৮ আবেদনকারীকে একটি করে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে পুরো দুর্নীতির প্রক্রিয়ায় আরডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছাড়াও প্লট গ্রহীতারাও সরাসরি জড়িত। এই কাজের জন্য বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে দুদকের অনুসন্ধানে। জানা গেছে, ২০০৬ সালের শুরুতে যখন এসব লোভনীয় বাণিজ্যিক প্লট প্রতি কাঠা মাত্র ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়, যদিও ওই সময় এসব জমির বাজারমূল্য ছিল কাঠাপ্রতি ৫ লাখ টাকা করে।

যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে তাঁরা হলেন আরডিএর সাবেক চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক এস্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক, হিসাবরক্ষক মো. রুস্তম আলী, নিম্নমান সহকারী মোস্তাক আহমেদ, রাজশাহীর বোয়ালিয়ার মো. এনামুল হক, আবু রায়হান শোয়েব আহমেদ সিদ্দিকী, ডা. এস এম খোদেজা নাহার বেগম, ডা. মো. রবিউল ইসলাম স্বপন, খায়রুল আলম ও অ্যাসথেটিক ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহফুজুল হক।