Thank you for trying Sticky AMP!!

আশাশুনিতে মা ও মেয়ে অ্যাসিডদগ্ধ

ফাতেমা সুলতান। ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন এক নারী ও তাঁর শিশুকন্যা। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার চাপড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

অ্যাসিডদগ্ধ নারীর নাম ফাতেমা সুলতান (২৯)। অ্যাসিডে তাঁর মুখমণ্ডল ও বুকের একাংশ ঝলসে গেছে। বাম চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। এ সময় তাঁর দুই বছর বয়সের মেয়ে জাফিয়া মেহজাবিনও অ্যাসিডদগ্ধ হয়েছে। জাফিয়ার মুখ ও শরীরের কয়েকটি স্থানে ফোঁটা ফোঁটা করে পুড়ে গেছে। তাঁরা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আজ মঙ্গলবার সকাল আটটায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ফাতেমার মুখ, চোখ, গলা ও বুকের একাংশ অ্যাসিডে ঝলসে গেছে। বাম চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। জাফিয়ার মুখে ও শরীরের কয়েকটি স্থানে ফোঁটা ফোঁটা অ্যাসিডে ঝলসানো। তবে শিশুটির অবস্থা এখন কিছুটা ভালো। সে মায়ের শয্যায় খেলা করছে। আবার কখনো নানি আকলিমা খাতুনের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

ফাতেমা সুলতানার ভাষ্য, পারিবারিকভাবে ২০০৬ সালে তাঁর সঙ্গে নড়াইল জেলার পঙ্কাবিলা গ্রামের শওকাত আলী মোড়লের ছেলে শাহাজাহান আলী মোড়লে বিয়ে হয়। তাঁদের দুটি মেয়ে আছে। শাহাজাহান আলী মাদকসেবী। প্রায়ই বাইরে থেকে মাদক সেবন করে এসে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালাতেন। যৌতুক দাবি করতেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ২০১৮ সালে তিনি চাপড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর বিভিন্ন মুঠোফোন নম্বর থেকে ফোন করে শাহাজাহান তাঁকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর নাম ও ছবি ব্যবহার করে ভুয়া আইডি খুলে নানা ধরনের আজেবাজে কথা লিখতেন। গত জুলাই মাসে এসব বিষয় উল্লেখ করে ফাতেমা আশাশুনি থানায় শাহাজাহানের নামে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও তাঁকে উত্ত্যক্ত করা থেমে থাকেনি।

ফাতেমা সুলতানা বলেন, বিচ্ছেদের পর থেকে তিনি চাপড়াতে তার ফুপা ইকবাল হোসেনের বাড়িতে থাকতেন। ইববাল হোসেন সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসেন। কয়েক দিন আগে তার ফুফু ও ফুপা ঢাকা চলে গেছেন। বাড়িতে তিনি একা ছিলেন। গতকাল রাত সাড়ে আটটা দিকে ঘর থেকে বের হন। এ সময় ছোট মেয়ে জাফিয়া তাঁর সঙ্গে ছিল। ঘরের বাইরে সাবেক স্বামী শাহাজাহানকে দেখতে পান। কিছু বোঝার আগেই শাহজাহান তাঁর দিকে অ্যাসিড ছুড়ে মেরে দৌড়ে পালিয়ে যান। ফাতেমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ফাতেমার মা আকলিমা খাতুন ও বাবা একরামুল কাদির জানান, নির্যাতনের কারণে তাঁদের মেয়ে শাহাজাহানকে তালাক দিতে বাধ্য হন। এরপরও শাহাজাহান তাঁদের মেয়েকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন ও নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতেন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হাফিজুল্লাহ জানান, ফাতেমার মুখমণ্ডল ও বুক মিলিয়ে শরীরের ২৭ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। কী ধরনের দাহ্য পদার্থে দিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। শিশু জাফিয়ার মুখে ও শরীরে কয়েকটি স্থানে সামান্য দগ্ধ হয়েছে। মারাত্মক নয়।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম জানান, বিষয়টি শোনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আজ সকালে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ফাতেমার সাবেক স্বামী শাহাজাহান তাঁকে অ্যাসিড মেরে ঝলসে দিয়েছেন। মামলা প্রস্তুতি চলছে।