Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদ এলেই ছাগল ছিনতাইয়ে ছাত্রলীগ নেতারা

সারা বছর ছাত্ররাজনীতি করেন। ছাত্রলীগের মোহাম্মদপুর থানা কমিটির শীর্ষ দুই নেতাও তাঁরা। কিন্তু ঈদুল আজহার আগে আগে শুরু করেন ছাগল ছিনতাই। সেই ছাগলগুলো নিয়ে অবৈধ হাট বসিয়ে রমরমা ব্যবসা করেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে কোরবানির জন্য আনা ছাগল ছিনতাই করেন মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মুজাহিদ আজমি এবং সাধারণ সম্পাদক নাইমুল ইসলামের সহযোগীরা। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, কোরবানির ঈদের আগে ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা নিজেদের অনুসারীদের মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ ও আসাদগেট এলাকায় দাঁড় করিয়ে দেন। এলাকার ভেতরের বিভিন্ন সড়কেও অবস্থান নেন কেউ কেউ। এসব পথ দিয়ে কোনো বিক্রেতা ছাগল নিয়ে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত হাটে যাওয়ার সময় তাঁদের জোর করে নিজেদের অবৈধ হাটে নিয়ে আসেন। নিজেরা ছাগল ছিনিয়ে নেন। আবার বিক্রেতাদের ওই হাটেই ছাগল বিক্রিতে বাধ্য করেন। বিক্রির দামের ওপর হাজারে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। 

ঈদের আগের দিন ১১ আগস্ট ২১২টি ছাগল ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয় মুজাহিদ আজমিসহ নয়জনের বিরুদ্ধে। তবে ছাত্রলীগেরই একটি পক্ষের অভিযোগ, গত বছর থেকে মোহাম্মদপুরে ছিনতাই করা ছাগল নিয়ে হাট চালু করেন থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাইমুল ইসলাম। মুজাহিদ পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। 

মামলার পর থেকে মুজাহিদ পলাতক। মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। আর অভিযোগ প্রসঙ্গে নাইমুল বলেন, ষড়যন্ত্রকারী পক্ষ এমন অভিযোগ করছে। তিনি কখনোই ছাগলের হাট বসাননি। মোহাম্মদপুর থানায় ছাত্রলীগ কোনো চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।

তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর থেকে নাইমুল ও মুজাহিদ অবৈধভাবে ছাগলের হাট বসিয়ে চাঁদা আদায় করেছে। এ নিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগও দিয়েছি। কিন্তু কেউ ব্যবস্থা নেয়নি।’

আর মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ও থানা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সমিউল আলীম চৌধুরী বলেন, মুজাহিদ স্থানীয় নন। কমিটিতে পদ পাওয়ার আগেও সেভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলের সিন্ডিকেট ধরেই হুট করে সভাপতি বনে যান তিনি। এরপর নিজেই একটি সিন্ডিকেট করে এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম করতেন। এসব কথা এলাকার সবাই জানেন।

একটি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের এপ্রিলে মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরপরই ওই বছরের কোরবানির ঈদের আগে টাউন হল এলাকায় ‘টাউন হল ছাগল ও খাসির হাট-২০১৮’ নামে অবৈধ ছাগলের হাট চালু করেন নাইমুল। মুজাহিদ তখন নাইমুলের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। নাইমুলের এক অনুসারী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, গেলবার হাট চালুর পর নাইমুল তাঁকে মোহাম্মদপুরের একটি সড়কের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ছাগল বিক্রেতাদের জোর করে টাউন হল হাটে নিয়ে যেতেন তাঁরা। ছাগল রেখে দেওয়া হতো কিংবা চাঁদা আদায় করা হতো। তিনি জানান, নাইমুল গত বছরের হাট বসিয়ে হাসিলের নামে ১২-১৩ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন। এবারও হাট বসান তিনি। 

গেলবার একসঙ্গে থাকলেও এ বছর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের জহুরি মহল্লায় আলাদাভাবে ছাগলের হাট চালু করেন মুজাহিদ। সহকারীদের ওয়াকিটকি দিয়ে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন সড়কে দায়িত্ব দেন। সহকারীরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীদের জোর করে মুজাহিদের ছাগলের হাটে নিয়ে যেতেন।

১১ আগস্ট শ্যামলীর শিশুমেলার সামনের সড়কে যশোর থেকে আসা পাঁচ ছাগল ব্যবসায়ীকে জিম্মি করেন মুজাহিদের সহযোগীরা। বাবর রোডের জহুরি মহল্লায় মুজাহিদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জিম্মি করে রাখা হয় তাঁদের। পরে র‍্যাব-৪-এর কাছে ধরা পড়েন মুজাহিদের তিন সহযোগী ইয়াসির আরাফাত, জাহিদুল ইসলাম ও মো. রায়হান। এই তিনজনই পরে পুলিশের কাছে মুজাহিদসহ এই কাজে আরও পাঁচ-ছয়জন জড়িত থাকার কথা স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেন।

মুজাহিদ মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় থাকেন। স্থানীয়রা জানান, কমিটিতে পদ পাওয়ার পর তিনি মাদক ব্যবসায় মদদ দেওয়া শুরু করেন। তাঁর মদদে পুলু নামের এক মাদক ব্যবসায়ী এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা করেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গণেশ গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।