Thank you for trying Sticky AMP!!

এক গডফাদারকে হত্যা করতে এসে গ্রেপ্তার শাকিল

র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাকিল মাজহার। ছবি: ফোকাস বাংলা

বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সহযোগী মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাকিল মাজহারকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। শনিবার ভোরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

র‌্যাব জানায়, এক গডফাদারকে হত্যা করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের দখল নিতে দুবাই থেকে ঢাকায় আসেন শাকিল মাজহার। তবে র‌্যাবের তৎপরতায় সে ‘মিশন’ ব্যর্থ হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও ছয়টি গুলি উদ্ধার করা হয়।

শাকিলের গ্রেপ্তার নিয়ে শনিবার বিকেলে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। তিনি বলেন, গত ১২ জানুয়ারি দুবাই থেকে ঢাকায় আসেন শাকিল। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল জিসানের নির্দেশ ও সহযোগিতায় আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। দেশে এসে ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অসুস্থতার কথা বলে ভর্তি হন। এরপর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। হাসপাতাল থেকে তিনি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সৃষ্টি করে আতঙ্ক ছড়াতে চেয়েছিলেন। তবে র‌্যাবের অভিযানে সে হীন প্রচেষ্টা নস্যাৎ হয়।

র‍্যাব জানায়, বিএসএমএমইউর মূল ভবনের চতুর্থ তলায় ভর্তি হন শাকিল মাজহার। কিন্তু চতুর্থ তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় নিবিড় পরিচর্যা ও সাধারণ সেবার মধ্যবর্তী ইউনিটে (এসডিইউ) যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতেন। গত ২৪ নভেম্বর থেকে সম্রাট বিএসএমএমইউতে ভর্তি। সম্রাটের ব্যাপারে বিভিন্নজনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ২০ ফেব্রুয়ারি অনুমতি না নিয়েই হাসপাতাল থেকে চলে যান।

র‍্যাবের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল মাজহার জানিয়েছেন, জিসানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তিনি দেশে এসেছেন। শাকিল ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন। পরে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের উপ-আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক হন। ২০০৯ সাল থেকে যৌথভাবে টেন্ডার–বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। রেলওয়েতে ছোট ছোট কাজের টেন্ডার নিয়ে কাজ করতেন তিনি। ২০১৩ সালে গ্রামের বাড়ি ফেনীতে গিয়ে পারিবারিক ব্যবসার পাশাপাশি গ্রাম্য রাজনীতি করেন। ২০১৫ সালে আবারও ঢাকায় আসেন। তাঁর সঙ্গে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার জি কে শামীমের সখ্য গড়ে ওঠে। এরপর যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার সঙ্গে রেলওয়ের টেন্ডার কাজ নিয়ে বিরোধ হয়। তবে ২০১৬ সালের জুন মাসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসম্পাদক রাজিব হত্যার এজাহারে নাম আসায় শাকিল বিদেশ চলে যান। দুবাই থাকা অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে জিসানের হয়ে ‘বিশেষ’ কাজ করতে নিযুক্ত হন।

তবে শাকিল মাজহারের পরিবারের দাবি, ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিএসএমএমইউ থেকে র‍্যাব সদস্যরা শাকিলকে ধরে নিয়ে যান। এরপর শনিবার দুপুরে তাঁকে অস্ত্র–গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

শাকিল মাজহারের চাচাতো ভাই সায়েম মাহমুদ প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, হৃদ্‌রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার কারণে ১৯ ফেব্রুয়ারি মাথা ঘুরে পড়ে যান শাকিল। সেদিন তাঁকে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে বিএসএমএমইউয়ে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই রাত সাড়ে ১১টার দিকে র‍্যাবের সদস্যরা এসে তাঁকে তুলে নিয়ে যান। তবে প্রথমে শাকিলের পরিবার বুঝতে পারেনি যে কারা তাঁকে তুলে নিয়ে গেছে। ওই রাতেই ৯৯৯-এ ফোন করা হয়। শাহবাগ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সায়েম মাহমুদ।