Thank you for trying Sticky AMP!!

এমবিএ করে ইয়াবা 'ব্যবসা'

ইয়াবা। ফাইল ছবি
• ৪ মে গ্রেপ্তার ইমরানুল ও তাইজুল সচ্ছল পরিবারের সন্তান।
• স্নাতকোত্তর পাস করার পর দুই বন্ধু জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসায়।


দুজনই সচ্ছল পরিবারের সন্তান। ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এরপর দ্রুত ধনী হতে টেকনাফের ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। শুরু করেন ইয়াবা কেনাবেচা। মাদক মামলায় রিমান্ডে এসে এসব জানান ইমরানুল হক (২৫) ও তাইজুল খান (২৭)।

৪ মে শ্যামপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল আট হাজার ইয়াবাসহ এই দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁদের বাসা থেকে উদ্ধার হয় আরও ৫২ হাজার ইয়াবা। রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই মাদক কেনাবেচায় জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করেন। তাঁরা জানান, রাজধানীর নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুজনে ২০১৫ সালে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর করেন। দুজনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ইমরানুলের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ, আর তাইজুলের মাদারীপুরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এক যুবকের মাধ্যমে টেকনাফের এক ‘বড় ব্যবসায়ী’র সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়। ‘বড় ব্যবসায়ী’ ব্যক্তি আসলে ইয়াবা পাচারকারী। আর যে যুবকের মাধ্যমে ইয়াবা পাচারকারীর সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়, তিনি এখন মালয়েশিয়ায়। ইয়াবা পাচারকারী প্রায়ই ঢাকায় আসতেন। তিনি ইমরানুল ও তাইজুলকে টাকাপয়সা দিতেন, ভালো-মন্দ খাওয়াতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর তিনি তাঁদের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি ভাড়া করে দেন। ইমরানুল ও তাইজুল ওই বাসায় বিনা ভাড়ায় থাকতেন, তার বদলে টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবা পাহারা দিতেন। মাঝেমধ্যে ইয়াবা পাচারকারী নিজেই আসতেন, আবার কখনো লোক মারফত চালান পাঠাতেন। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী দুই বন্ধু বিক্রেতাদের মধ্যে ইয়াবা বণ্টন করতেন। একপর্যায়ে ইয়াবা পাচারকারী ইমরানুল ও তাইজুলকে প্রস্তাব দেন পাহারাদারের কাজ ছেড়ে ইয়াবা বিক্রির কাজ নিতে। প্রতি বড়িতে লাভ দেবেন ১০ টাকা করে। ৫০ হাজার বড়ির একটা চালান বিক্রি করতে পারলে পাবেন পাঁচ লাখ টাকা। এ প্রস্তাব তাঁরা লুফে নেন। এরপর শুরু করেন ইয়াবা কেনাবেচা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ৪ মে ইমরানুল ও তাইজুলকে ফাঁদ পেতে গ্রেপ্তার করেন। তাঁরা একজন সোর্সের মাধ্যমে আট হাজার ইয়াবা কেনার প্রস্তাব দেন। সে অনুযায়ী ইমরানুল ও তাইজুল গাড়িতে করে আট হাজার ইয়াবা নিয়ে আসেন। গাড়িটিও একজন ইয়াবা পাচারকারীর বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 গ্রেপ্তার হওয়া দুই যুবক বলেছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৈরি পোশাকসামগ্রী বিক্রি করতেন, তাঁদের ট্রাভেল এজেন্সিও আছে। তবে তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন, তাঁরা আসলে ট্রাভেল এজেন্সির আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা করতেন। জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলছিলেন, টেকনাফের ইমরানুল পারিবারিকভাবেই বিত্তশালী। তাইজুলদের বাড়ি মাদারীপুর জেলার হবিগঞ্জের উত্তর দূতখালীতে। বাবা মোতালেব খান ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। তাইজুলরা পাঁচ ভাই, চারজনই ইতালিতে থাকেন। ইতালিতে গিয়ে ভাগ্য বদলানোর সুযোগ ছিল কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, দেশেই ধনী হতে চেয়েছিলেন তিনি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মুখপাত্র খোরশিদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, দুজনেই একাধিক মাদক মামলার আসামি। যাত্রাবাড়ী ও কক্সবাজারে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁরা সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত জেলে থাকেন। এরপর বেরিয়ে এসে আবার ইয়াবার কারবার শুরু করেন।