Thank you for trying Sticky AMP!!

কারাধ্যক্ষসহ পাঁচ কারা কর্মীর দায় শনাক্ত

পরিচয় অদলবদল করে কারাগার থেকে খুনের মামলার আসামির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন কারাগারের পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় দফার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় তাঁদের যোগসাজশ, দায়িত্বে অবহেলা, জেল কোড লঙ্ঘনসহ নানা রকম অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ৯ মে খুনের মামলার আসামি তারেক উদ্দিন প্রতারণার মাধ্যমে চুরির মামলার আসামি মোহাম্মদ হোসেনের জামিননামার কাগজ ব্যবহার করে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। অভিনব এই প্রতারণা নিয়ে প্রথম আলোয় গত বছরের ২৭ এপ্রিল প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একজন কারা উপমহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি তিন দফায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। সর্বশেষ প্রতিবেদন জমা পড়েছে এ বছরের ১ জানুয়ারি।

প্রতিবেদনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন পর্যায়ের অবহেলা চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কারাগারে বন্দীদের প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরিচয় শনাক্তকরণে যেসব রুটিন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, তা ঠিক থাকলে এমন ঘটনা ঘটা সম্ভব হতো না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দীর ছবি তোলার দায়িত্ব পালনকারী কারারক্ষী আবু রায়হান ওই দুই বন্দীর ছবি তোলা থেকে বিরত ছিলেন। জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ছবি তোলার নিয়ম থাকলেও তিনি নিশ্চিত না করে একজনের জায়গায় অন্যজনের ছবি তুলে ভর্তি রেজিস্টারে সংযোজন করেছেন। ডেপুটি জেলার ফেরদৌস মিয়া আসামি মোহাম্মদ হোসেনের ছবি তোলার কোনো ব্যবস্থা নেননি। দৈহিক বিবরণও রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করানোর ব্যবস্থা করেননি। কারা হাসপাতালের সেবক নূরুজ্জামানের ওপর বন্দীর শনাক্তকরণ চিহ্ন, ওজন, উচ্চতা ও বয়স, স্বাস্থ্যগত অন্য তথ্য বন্দীর সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল। তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেননি। তাঁর রাখা রেজিস্টারের তথ্যের ভিত্তিতেই জামিন হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রধান কারারক্ষী শরিফ উদ্দিন ওই দুই আসামিকে কারা হাসপাতালে পাঠানোর সুযোগ করে দেন। একজনের নামে আরেকজনের জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি জেনেও কারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি।

প্রতিবেদনে আসামি তারেক ও হোসেনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককে তাঁর দায়িত্ব ও কর.্তব্যে আরও যত্নশীল হওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া কর্তব্যে অবহেলার কারণে নূরুজ্জামান, আবু রায়হান ও শরিফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ এবং জেল কোড লঙ্ঘন করার জন্য গাজীপুরের জেলার নাশির আহম্মেদ ও ডেপুটি জেলার ফেরদৌস মিয়াকে দায়ী করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওই কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি জেলের প্রধান হিসেবে সব দায়িত্ব আমার ওপরই বর্তায়। আমার আরও সতর্ক হওয়ার দরকার ছিল। এ ছাড়া যে কারারক্ষীদের দায়ী করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে জেলার বা অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার কারা মহাপরিদর্শকের। কোনো দোষীই ছাড় পাবে না।’

তারেক উদ্দিনের বিরুদ্ধে যে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, তার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৯ মে রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকার উত্তরা ব্যাংকের সামনে ব্যবসায়ী জহির উদ্দিনকে গুলি করে তাঁর ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যান মোটরসাইকেলের তিন আরোহী। তাঁদের একজন ছিলেন তারেক উদ্দিন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা জহিরকে মৃত ঘোষণা করেন।