Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই মামলায় জামিন পেলেন কার্ড জালিয়াত চক্রের পিওতর

পিওতর সিজোফেন। ফাইল ছবি

গুলশান ও বিমানবন্দর থানার পৃথক দুটি মামলায় জামিন পেয়েছেন কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার বিদেশি নাগরিক পিওতর সিজোফেন মুজারেক। সম্প্রতি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে তিনি এ দুটি জামিন পান।
তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে করা বনানী থানার অপর একটি মামলায় জামিন পাননি পিওতর সিজোফেন। ফলে তাকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।
দুটি মামলায় পিওতরের সিজোফেন মুজারেকের জামিন পাওয়ার বিষয়টি জানেন না মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পিওতরের বিরুদ্ধে থাকা গুলশান থানার মামলাটি তদন্ত করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। এই পুলিশ কর্মকর্তা বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, আসামি পিওতর সিজোফেন জামিন পেয়েছেন কি না তা জানা নেই।
কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন পিওতর সিজোফেন। বনানী থানার মামলায় ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন পিওতর সিজোফেন। গুলশান থানার মামলায় আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, পিওতর জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি এয়ার ট্রাভেলসে বসে বিদেশি কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আনেন। আরেক আসামি জাফর আদালতকে জানান, পজ মেশিনের মাধ্যমে পিওতর বিদেশি নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চুরি করে ডলার আনেন।
রাজধানীর গুলশানে সিটি ব্যাংকের পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) যন্ত্রে অর্থ জালিয়াতির অভিযোগে হওয়া মামলায় পিওতর সিজোফেনকে ২০১৬ সালের ১১ জুলাই গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ মামলায় বুধবার পিওতরের জামিন মঞ্জুর করেছেন ঢাকার সিএমএম আদালত। এর আগে পিওতরের জামিনের পক্ষে শুনানি করা হয়। জামিনের লিখিত আবেদনে বলা হয়, পিওতরের নাম মামলার এজাহারে নেই। সন্দেহের ভিত্তিতে তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তিন বছর হয়ে গেলেও মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে আসামি জেলহাজতে আছেন।

জামিনের আদেশে বলা হয়েছে, জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ বক্তব্য দিয়েছেন। জামিনের আবেদনসহ নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি সন্দেহভাজন। আসামির কাছ থেকে কোনো কিছু উদ্ধার করা হয়নি। সার্বিক বিবেচনায় তিন হাজার টাকা মুচলেকায় আসামির জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হলো।

তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের রফিকুল ইসলাম বলেন, এখনো মামলাটির তদন্ত শেষ হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। পিউতর সিজোফেন কার্ড জালিয়াতি চক্রের প্রধান ব্যক্তি।

অন্যদিকে, বিমানবন্দর থানায় করা পাসপোর্ট আইনের মামলার আসামি পিওতর সিজোফেন ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে গত ১৩ মে জামিন পেয়েছেন। ওই মামলায় পিওতরের পক্ষে জামিননামা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুর রহমান বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, পাসপোর্ট আইনের মামলায় বিদেশি নাগরিক পিওতর জামিন পেয়েছেন।

পিওতরকে গ্রেপ্তার করার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিওতর বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর সঙ্গে এ কাজে আরও জড়িত আছেন লন্ডনপ্রবাসী এক বাংলাদেশি, বুলগেরিয়ার ও ইউক্রেনের একজন করে নাগরিক। তাঁদের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের গ্রেপ্তার তিন কর্মকর্তারও যোগসাজশ রয়েছে।

পিওতরের জন্মস্থান ইউক্রেন। তবে তিনি জার্মানির নাগরিক। থমাস পিওতর নামে তাঁর পোল্যান্ডের পাসপোর্টও রয়েছে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি ইস্টার্ন, সিটি ও ইউসিবিএল ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা তুলে নেয় চক্রটি। এরপর ঘটনার শিকার গ্রাহকেরা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল), সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এই সেক্টরের কড়া নিরাপত্তা সুরক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকও দ্রুত এগিয়ে আসে। মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

২০১৬ সালের ৬ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি ব্যাংক ইস্টার্ন, সিটি, ইউসিবিএলের গুলশান, বনানী ও পল্লবীর কালশীর চারটি বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ নামের যন্ত্র বসিয়ে গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি এবং পরে ক্লোন কার্ড তৈরি করে টাকা তুলে নেওয়া হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংকের একাধিক গ্রাহক মুঠোফোনের খুদে বার্তার মাধ্যমে তাঁদের হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টি জেনে ব্যাংকে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়ে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জালিয়াতিতে দেশীয় চক্রকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছেন ইউক্রেনের নাগরিক অ্যান্ড্রি ও রোমানিয়ার নাগরিক রোমিও। চক্রের সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ফরিদ নাবির ২০১৫ বছরের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছিলেন। ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি আসেন অ্যান্ড্রি ও রোমিও। এটিএম কার্ড জালিয়াতির পর ১৩ ফেব্রুয়ারি রোমিও ও পরদিন অ্যান্ড্রি বাংলাদেশ ছাড়েন।