Thank you for trying Sticky AMP!!

কুয়েতি চাচাদের প্রভাবে ফয়জুর সালাফি

হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে ফয়জুরকে

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল (২৪) সালাফি মতাদর্শী। কুয়েতপ্রবাসী দুই চাচা তাঁকে এই মতাদর্শ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন বলে তাঁর আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

ফয়জুর দিরাই উপজেলার ধল দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৪ সালে দাখিল (এসএসসি সমমান) পাস করেন বলে জানা যায়।

সালাফি মতাদর্শীদের কোনো কোনো এলাকায় ‘লা মাজহাবি’ (মাজহাববিরোধী) বলা হয়। ফয়জুর সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের নিজ গ্রামে ‘লা মাজহাবি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সালাফি মতাদর্শীদের মতো নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ফয়জুরের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

ওই গ্রামের বাসিন্দা ও জগদল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ফয়জুরদের পরিবারের সঙ্গে গ্রামের লোকজনের তেমন সম্পর্ক ছিল না। তিনি জানান, ফয়জুরের কুয়েতপ্রবাসী দুই চাচা লা মাজহাবি ছিলেন। তাঁরা ভিন্ন কায়দায় নামাজ পড়তেন। চাচাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ফয়জুরও ওই মতাদর্শ গ্রহণ করেন। সেভাবে নামাজ পড়া শুরু করেন। পরে গ্রামবাসী তাঁদের জানিয়ে দেয়, তাঁরা যেন গ্রামের অন্য কাউকে তাঁদের মতাদর্শে যুক্ত না করেন।

প্রতিবেশীরা জানান, ফয়জুর রহমানের বাবা আতিকুর রহমান ১৫ বছর আগে দিরাই ছেড়ে সপরিবারে সিলেটে চলে গেলেও ফয়জুর মাঝেমধ্যে নিজ গ্রামে আসতেন। গ্রামের বাজারে লুঙ্গি-গামছা ফেরি করে বিক্রি করতেন। সর্বশেষ তিন মাস আগে ফয়জুর দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের কলিয়ার কাপন গ্রামে নিজ বাড়িতে এসেছিলেন বলে প্রতিবেশীরা জানান।

ওই গ্রামের মোজাহিদ আলী জানান, ফয়জুর গ্রামে এলে দু-এক দিন থেকে আবার চলে যেতেন। তিনি গ্রামের বাজারে লুঙ্গি-গামছা ফেরি করে বিক্রি করতেন। মানুষের সঙ্গে তেমন একটা মিশতেন না।

একই গ্রামের লুৎফুর রহমান চৌধুরী বলেন, ফয়জুর গ্রামে এলে মসজিদে ভিন্ন তরিকায় নামাজ পড়তেন। গ্রামের মুরব্বিরা তাঁকে নিষেধ করলেও কাজ হয়নি।

স্থানীয় লোকজন জানান, ফয়জুর রহমানের বাবা আতিকুর রহমান সিলেটে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। সেখানে মা-বাবার সঙ্গেই থাকতেন ফয়জুর। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বড় ভাই এনামুল ঢাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। আরেক ভাই আবুল ছয় মাস আগে কুয়েতে চলে গেছেন। তাঁর দুই চাচা আবদুল জাহের ও আবদুল সাদিক কুয়েতপ্রবাসী। বাড়িতে আছেন আরও দুই চাচা আবদুল কাহের ও আবদুল বাতেন। এঁদের মধ্যে ঘটনার পর থেকে আবদুল বাতেন বাড়িতে নেই। আবদুল কাহেরকে গতকাল ভোরে বাড়ি থেকে আটক করেছে র‍্যাব। র‍্যাবের সুনামগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানির কমান্ডার ফয়সাল আহমেদ গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে জানান, আবদুল কাহেরকে তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ফয়জুরের ফুফু রেহেনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ফয়জুরদের পরিবার মাঝেমধ্যে সিলেট থেকে দিরাইয়ের গ্রামের বাড়িতে আসত। দু-এক দিন থেকে আবার চলে যেত। বাকি সময় ফয়জুরদের ঘরটি তালাবদ্ধ থাকে।

ফয়জুর রহমান ২০১৪ সালে দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ধল দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। ধল গ্রামে লজিং থেকে তখন লেখাপড়া করতেন। ধল মাদ্রাসার সুপার মো. ফারুক আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, দাখিল পাস করার পর ফয়জুর রহমান কোথাও লেখাপড়া করেছেন কি না, তা তিনি জানেন না।

এদিকে শনিবার দিবাগত গভীর রাতে পুলিশ কলিয়ার কাপন গ্রামে গিয়ে ফয়জুর রহমানের বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু কাউকে পায়নি। দিরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এম দেলোয়ার হোসেন জানান, এলাকায় ফয়জুর রহমানের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য তাঁরা পাননি।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘আমরা গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, শুধু ফয়জুর রহমানই আহলে হাদিসের তরিকায় নামাজ পড়তেন, পরিবারের অন্যরা নয়। এ কারণে পরিবারের লোকজনও তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট ছিল।’