Thank you for trying Sticky AMP!!

কয়রায় 'এলাকাবাসীর' হামলায় ছাত্রলীগ নেতা নিহত, আটক ২

হাদিউজ্জামান রাসেল। ছবি: সংগৃহীত

খুলনার কয়রায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাদিউজ্জামান রাসেল (২৮) মারা গেছেন। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করেছে।

গতকাল রোববার বিকেলে একটি ব্রিজ নির্মাণকে কেন্দ্র করে উপজেলার বাগালী ইউনিয়নে এলাকাবাসীর মারধরের শিকার হন হাদিউজ্জামান। রাতেই তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হচ্ছিল।

খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. আবু সাঈদ খান বলেন, হাদিউজ্জামানের অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাতেই তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছিল। ভোরে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পৌঁছানোর পর তিনি মারা যান। তাঁর মরদেহ খুলনায় আনা হচ্ছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করার পর আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হবে।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগালী ইউনিয়ের বাইলহারানিয়া গ্রামে বাতিকাটা খালের ওপর একটি ছোট ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছিল। গতকাল সকালে বেসমেন্ট ঢালাই করার প্রস্তুতি চলছিল। তবে ব্রিজের পাশের জায়গা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার তুহিন হোসেন ও তাঁর ভাই মিলন হোসেন ওই কাজ বন্ধ করে দেন। বিকেলের দিকে কয়েকটি মোটরসাইকেলযোগে হাদিউজ্জামান ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ জন নেতা-কর্মী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তাঁরা তুহিনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ব্রিজের পাশে মারধর করেন। ওই ঘটনায় প্রথমে তুহিনের ভাই মিলনের নেতৃত্বে তাঁর স্বজনেরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন। পরে ওই হামলায় যুক্ত হন আশপাশের মানুষ। এ সময় অন্য ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যেতে পারলেও এলাকাবাসীর গণধোলাইয়ের শিকার হন হাদিউজ্জামান।

ওই হামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী ইয়াছিন আরাফাত (১৯), রাজু (২২), আবদুল্লাহ (২৯), আবুল হাসান (২০) ও সেলিম (৩২) এবং বাইলহারানিয়া গ্রামের তুহিন হোসেন (৩৭), হোসনে আরা (৫৫), বাবু (৩৫), মিলন (৩০) ও সুইট (২২) আহত হন। আহত ব্যক্তিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনার পর পুলিশ আহত তুহিন ও তাঁর ভাই মিলকে আটক করেছে।

বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার পাড় বলেন, তুহিনদের বাড়ির পাশেই হচ্ছে ব্রিজটি। এ কারণে তাঁরা চাইছিলেন ব্রিজটি একটু সরিয়ে নির্মাণ করা হলে তাঁদের জন্য সুবিধা হতো। এটা নিয়েই সকালের দিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে তুহিনদের ঝগড়া হয় বলে তিনি শুনেছেন। ঘটনার সময় তিনি (চেয়ারম্যান) সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। হাদিউজ্জামান ও তুহিনদের বাড়ি একই পাড়ায়। তাঁরা একই বংশের লোক বলে জানান তিনি।

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা একটা পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি, তবে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত দুজনকে আটক করা হয়েছে।

কয়রা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের আওতায় ওই কাজ করা হচ্ছিল। ২৪ লাখ টাকা মূল্যের ওই কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচ এইচ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. হারুন-অর-রশিদ। তিনি জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

হারুন-অর-রশিদ বলেন, তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়ে ওই কাজ করছিলেন কয়রার মনিরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি। তবে কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।

মনিরুজ্জামান বলেন, কাজসংক্রান্ত কোনো ব্যাপার নিয়ে ওই ঘটনা ঘটেনি। ওই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। ওই ব্রিজ নির্মাণে তাঁর কোনো বিনিয়োগ নেই। তিনি শুধু কাজ তদারকি করছেন।