Thank you for trying Sticky AMP!!

খিলক্ষেতে রেলের জায়গায় বাজার, চাঁদাবাজি

রেললাইনের পাশের এই জায়গায় প্রতিদিন বসে কাঁচাবাজার। গত শুক্রবার খিলক্ষেতে। প্রথম আলো

জায়গাটি রেলওয়ের। সেখানে কাঁচাবাজার বসিয়ে প্রতিদিন তোলা হয় চাঁদা। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা, বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, চাঁদাবাজির নেপথ্যে আছেন খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিন।

খিলক্ষেতে রেললাইন ঘেঁষে পাইকারি কাঁচাবাজারটি বসে। ভোররাতে বাজারে বেচাকেনা শুরু হয়, শেষ হয় দুপুরের মধ্যে। ১৫-২০ বছর আগে থেকেই কাঁচাবাজারটি চলছে।

এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে দোকান (বিট) আছে ১০৪টি। একেকটি দোকান থেকে প্রতিদিন ৩৩০ টাকা ওঠানো হয়। ভোর থেকেই এই চাঁদা তোলেন মনির মোল্লা নামের এক ব্যক্তি। সেখান থেকে ১৩০ টাকা পান আসলাম উদ্দিন। বাকি ২০০ টাকা পান দোকানের জায়গা যাঁর দখলে, তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মনির মোল্লা বাজারে আসেন। এসেই তিনি বাজারের দক্ষিণ মাথায় লাউশাকের এক পাইকারের কাছ থেকে টাকা নেন। এরপর তিনি একে একে দোকানিদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছিলেন। মনির যাওয়ামাত্রই ব্যবসায়ীরা টাকা বের করে দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে হঠাৎ তিনি বাজার থেকে চলে যান।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, মনির আর আসলামের বাসা পাশাপাশি। খিলক্ষেত মধ্যপাড়ার মাতবরের মসজিদের কাছেই তাঁদের বাসা।

চাঁদা দাবির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে চাইলে মনির মোল্লা প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার প্রস্তাব দেন।

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বাজারের ১৫-২০টি দোকান পুরোনো ব্যবসায়ীদের। তাঁদের ভাড়া দিতে না হলেও চাঁদার ১৩০ টাকা দিতে হয়। বাজারের বাকি দোকানগুলো খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের নামে। আসলামের স্বজনদের নামেও বাজারে দোকান আছে। তাঁদের চাঁদা দিতে হয় না।

ব্যবসায়ীরা বলেন, আসলামের নামে মনির মোল্লা দুই বছর ধরে চাঁদা তোলার কাজ করছেন।

বাজার থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমি চাঁদাবাজির বিষয়ে জানি না। মনির কার টাকা ওঠায়, সেটাও জানি না। আমার প্রতিপক্ষের লোকজন আমার নামে এসব কথা বলছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলী দেওয়ান বলেন, ‘টাকা মূলত মনির মোল্লা ওঠান। তিনি আসলামকে টাকাটা দেন। খিলক্ষেতের বাসিন্দারা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। স্পটে লোক লাগিয়ে তাঁকে হাতেনাতে ধরতে হবে। আমি এই বিষয়ে বিরক্ত হয়ে গেছি।’ আসলামের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে গেলে আমার অনেকে শত্রু হবে। আমি এসব বিষয়ে অনেক চেষ্টা করেছি, অনেক জায়গায় বিচার দিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। তাই নিজেই দূরে চলে এসেছি।’

মাছবাজারে চাঁদাবাজি

খিলক্ষেতের ওই বাজারের এক কোনায় মাছ বিক্রি করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, এই মাছবাজার থেকেও চাঁদা তোলা হয়। এই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সহসম্পাদক মিজানুর রহমান ওরফে মুকুল ও যুবলীগের স্থানীয় এক নেতা।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে ২৫–৩০ জন ব্যবসায়ী মাছ বিক্রি করেন। প্রতিজনের কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০–১৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘যুবলীগের পোলাপাইনের জন্য ওগুলো ভাগ করা।’ আপনি নিজেও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, এ কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমি ওটার ধারেকাছে নাই। ওটা আমি ধরি না।’ একপর্যায়ে মিজানুর সাক্ষাৎ করে কথা বলার প্রস্তাব দেন।

রেলের বক্তব্য

রেলের জায়গায় অবৈধ বাজার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলওয়ের সম্পত্তি বিভাগের উপকমিশনার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সব অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে পারবেন বলে তাঁরা আশা করছেন। তবে এ জন্য স্থানীয় সবার সহযোগিতা লাগবে। তিনি আরও বলেন, যাঁরা রেলের জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বাজার ও দোকান বসিয়ে টাকা ওঠাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।