Thank you for trying Sticky AMP!!

গৃহবধূকে অ্যাসিড খাইয়ে হত্যার চেষ্টা

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে রিপা রানী পণ্ডিত (২৩) নামের এক গৃহবধূকে অ্যাসিড পান করিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রিপা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
দেশের ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে জানান, রিপা আশঙ্কামুক্ত নন। তবে তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। হাসপাতালে রিপার সঙ্গে থাকা তাঁর ছোট ভাই অপু পণ্ডিত জানান, রিপা কথা বলতে পারছেন না। মুখ, গলা ও জিব পুড়ে গেছে। তাঁকে স্যালাইন দিয়ে খাবার দেওয়া হচ্ছে।
রিপার পারিবারিক সূত্র জানায়, রিপা রানীর বাড়ি নেত্রকোনা সদর উপজেলার সতরশ্রী গ্রামে। প্রায় এক বছর আগে কটিয়াদীর আদমপুর গ্রামের রবি পণ্ডিতের ছেলে রতন পণ্ডিতের সঙ্গে রিপার বিয়ে হয়। দুজন পরস্পরের আত্মীয়। বিয়ের সময় বরপক্ষের দাবি অনুযায়ী এক লাখ ১০ হাজার টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণালংকার দেওয়া হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই বিভিন্ন অজুহাতে স্বামী তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। পরে আবারও পণের জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে রিপা বাবার বাড়িতে চলে যান। সেখানে ছিলেন চার মাস। এক মাস আগে তিনি স্বামীর বাড়ি ফিরে যান। তবে তাঁদের মধ্যে কলহ বন্ধ হয়নি। ২৬ জুলাই দুপুরে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি রিপাকে একটি ঘরে আটকে জোর করে মুখে পানিমিশ্রিত অ্যাসিড ঢেলে দেন। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকলে তাঁকে প্রথমে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে বাজিতপুরে অবস্থিত জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. মাকসুদ বলেন, ‘অ্যাসিড পান করায় আমরা মেয়েটিকে (রিপা) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।’
গতকাল সতরশ্রী গ্রামে রিপার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের জন্য মা কাঁদছেন। মামলা করতে বাবা গেছেন কটিয়াদী থানায়। মা দেবী রানী পণ্ডিত জানান, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে রতন পণ হিসেবে এক ভরি স্বর্ণালংকার দাবি করছিলেন। পণ না পেয়ে প্রায়ই রিপাকে মারধর করতেন। ঘটনার আগের দিনও রিপা মুঠোফোনে তাঁদের (মা-বাবা) নির্যাতনের কথা জানিয়েছিলেন। এ কারণে রিপার মুঠোফোন সেট ভেঙে ফেলেন রতন। এরপর প্রতিবেশীর একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে কল করে হত্যার শিকার হওয়ার আশঙ্কার কথা তাঁদের (মা-বাবা) জানিয়েছিলেন রিপা। দেবী পণ্ডিত আরও জানান, ঘটনার দিন বিকেলে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে মেয়েকে অ্যাসিড খাওয়ানোর কথা জানতে পারেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রতন পণ্ডিতের আদমপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেউ নেই। সব কটি ঘরের দরজায় তালা। কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, রতনের বাবা স্বর্ণালংকার তৈরির কারিগর। বাড়িতেই স্বর্ণালংকার তৈরি করেন। ঘটনার দিন চিৎকার শুনে সেখানে গিয়ে দেখেন, রতন ও তাঁর বাবা-মা রিপাকে ঘর থেকে বের করে আনছেন।
রতন পণ্ডিত মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, পারিবারিক কলহ থেকে রাগের মাথায় রিপা নিজেই অ্যাসিড খেয়ে বসে। পরে তাঁরা রিপাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেদায়াতুল ইসলাম গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে। রাতের মধ্যে হয়ে যাবে। ওসি আরও বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে আমরা রতনের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি। তবে ঘরে তালা ঝুলিয়ে সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন।’