Thank you for trying Sticky AMP!!

গ্রাহকের টাকায় ফ্ল্যাট ও গাড়ি মশিউরের

আকাশনীলের ওয়েবসাইট খোলা হয় ২০১৯ সালে। ২০২১ সালে এসে লোভনীয় অফারে শুরু হয় প্রতারণা।

মশিউর রহমান

আকাশনীল নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান খোলার আগে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমানের (২৯) কোনো সম্পদ ছিল না। তবে প্রতিষ্ঠানটি খোলার পর দুই বছরের মাথায় ২০২১ সালে তিনি প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। একই সময়ে কেনেন দুটি গাড়িও।

মশিউর রহমানের আয় নিয়ে অনুসন্ধান শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মামলার এজাহারে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। গত ২৬ জুন অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে ওই মামলা করেন সিআইডির পরিদর্শক মো. জেহাদ হোসেন। মশিউরের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার চন্দ্রবাজার গ্রামে।

মশিউর রহমানের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ যাতে হস্তান্তর কিংবা রূপান্তর না হয়, সে জন্য আদালতের আদেশ চেয়ে আবেদন করবে সিআইডি।
মো. জেহাদ হোসেন, পরিদর্শক, সিআইডি

সিআইডির পরিদর্শক জেহাদ হোসেন গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, আকাশনীল খোলার আগে ঢাকায় কিংবা ফরিদপুরে মশিউর রহমানের কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে কম মূল্যে পণ্য দেওয়ার ফাঁদে ফেলে মশিউর অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেক টাকার মালিক হন। অপরাধলব্ধ আয়ে কেনা বাড়ি, গাড়িসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মশিউর রহমানের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ যাতে হস্তান্তর কিংবা রূপান্তর না হয়, সে জন্য আদালতের আদেশ চেয়ে আবেদন করবে সিআইডি।’

গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ মার্চ আকাশনীলের এমডি মশিউর রহমান র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেছেন, মশিউর রহমান হয়রানির শিকার।

সিআইডির অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের মামলায় বলা হয়েছে, আকাশনীলের জন্য ২০১৯ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেন মশিউর রহমান। প্রথমে কাঁঠালবাগানে অফিস ছিল। পরে শেরেবাংলা নগরে অফিস স্থানান্তর করা হয়। আকাশনীলের পক্ষ থেকে কম মূল্যে পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো। এভাবে ৩১ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

ফরিদপুরের জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য তুলে ধরে সিআইডির কর্মকর্তা জেহাদ হোসেন বলেন, ফরিদপুরে মশিউর রহমানের সম্পদ না থাকলেও ধানমন্ডির ১৩ নম্বর রোডে একটি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা দিয়ে ১,৮৪৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কেনেন মশিউর। তাঁর নামে দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। এর একটির দাম ২৬ লাখ ও অপরটির ১৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া তাঁর তিনটি ব্যাংক হিসাবে টাকা আছে ৫ লাখ ২১ হাজার।

মামলাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মশিউর রহমান ব্যবসায় নামেন। গার্মেন্টসের পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে তা নিউমার্কেট এলাকায় বিক্রি করতেন। পরে ২০১৯ সালে আকাশনীল নামে ওয়েবসাইট বানান। ওই বছরই ফেসবুক পেজ বানিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। দুই বছর ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কৃষিপণ্য বিক্রি করলেও ব্যবসায় সফলতা পাননি মশিউর। তবে ২০২১ সালের জুন থেকে কম মূল্যে মোটরসাইকেল বিক্রির ফাঁদে ফেলে অল্প সময়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

মশিউরকে গ্রেপ্তারের পর গত ২১ মার্চ র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ই-কমার্স কোম্পানি ‘ইভ্যালি’ ও ‘ধামাকা শপিংয়ের’ ব্যবসা দেখে ২০২১ সালের মে মাসে ‘আকাশনীল’ ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করে। সাত মাসে ২৩-৩০ শতাংশ ছাড়ে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৩২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কোম্পানিটি। তখন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছিলেন, গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে দুবাই পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মশিউর। তাঁর কাছ থেকে দুবাই যাওয়ার একটি বিমানের টিকিট পাওয়া গেছে। মশিউরের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আকাশনীলের পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রনি (৩২)। তিনিও কারাগারে।

গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবের পক্ষ থেকেও আরও জানানো হয়েছিল, ‘আকাশনীলকে’ পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেন মশিউর। কোম্পানিটির এমডি ও সিইও নিজে হলেও চেয়ারম্যান ছিলেন তাঁর মা। আর স্ত্রীকে করেছিলেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার বা অংশীদার। অন্য পদেও ছিলেন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা।