Thank you for trying Sticky AMP!!

গ্রেপ্তারের এক ঘণ্টা পর মৃত্যু নিয়ে পরিবারের প্রশ্ন

প্রতীকী ছবি

হবিগঞ্জে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের এক ঘণ্টা পর মারা গেছেন ফারুক মিয়া (৪৮) নামের এক ব্যক্তি। ফারুকের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের বাড়ি হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর আবাসিক এলাকায়। পেশায় তিনি রাজমিস্ত্রি ছিলেন।

এ দিকে এটিকে হত্যাকান্ড দাবি করে শহরের মোহনপুর আবাসিক এলাকার লোকজন আজ সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ পৌরসভার মাঠে এক প্রতিবাদ সভা করেন। সভায় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি করা হয়।

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী দাবি করেন, গতকাল ফারুক মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে তিনটার দিকে তিনি মারা যান। তিনি আগে থেকে হ্নদরোগে ভোগছিলেন।

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জুয়েল সরকারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ফারুক মিয়াকে তাঁর মোহনপুরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত দুটি মামলায় তিন মাসের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। পুলিশ ফারুককে গ্রেপ্তার করে প্রথমে থানায় নিয়ে যায়। তিনি অসুস্থবোধ করলে তাঁকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসা কর্মকর্তা মিঠুন রায়। তিনি বলেন, ফারুক মিয়া বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। বেশ কয়েকবার বমিও করেন। তবে তাঁর দুই হাতে ও বাম পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। এ আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে কিনা তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না।

নিহতের দুই ছেলে শাহরিয়ার মাসুক ও শাহরিয়ার গাফফার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাদের বাবা সুস্থ ছিলেন। পুলিশ হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বাবার বুকে কালো দুটি আঘাতের চিহ্ন আছে। পাশাপাশি দুই হাতের কনুই পর্যন্ত এবং বা পায়ের আঙল থেঁতলে দেওয়া হয়েছে মারধর করে। তাঁরা এটাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন।

নিহতের ছোট ভাই নুরুজ্জমান অভিযোগ করেন, গতকাল রাত আড়াইটার দিকে তাঁর ভাইকে পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। আটকের পর গাড়িতে তাঁকে মারধর করা হয়। হবিগঞ্জ সদর থানার ভেতরে নিয়ে আরেক দফা মারধর করা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হবিগঞ্জ পৌরসভার মাঠে এক প্রতিবাদ সভা করেন এলাকাবাসী। সভায় ফারুক মিয়াকে পুলিশি নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন বক্তরা। পাশাপাশি অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে তাঁরা ঘটনাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি তোলেন। এতে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান ও কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ উল্যা নিহত ফারুক মিয়ার মরদেহ দেখতে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে যান। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম, হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি মাসুক আলী ও একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এসপি নিহতের পরিবারের উদ্দেশে বলেন, মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে মৃত্যুর কারণ। তিনি বলেন, পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী বলেন, ফারুক মিয়ার লাশের ময়নাতদন্ত আজ দুপুরে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। পরে নিহতের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।