Thank you for trying Sticky AMP!!

চট্টগ্রামে 'বাঘা জুয়াড়ি' সবাই লাপাত্তা

প্রথম আলো ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম নগরের নামী–বেনামি শতাধিক ছোট–বড় ক্লাবে বসত জুয়ার আসর। চলত লাখ লাখ টাকার খেলা। ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান ও গ্রেপ্তারে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বাঘা বাঘা জুয়াড়িরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

গত শুক্র ও শনিবার র‍্যাব-পুলিশ ছয়টি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযানে ক্যাসিনোসহ জুয়া খেলার আলামত পায় র‍্যাব। মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও আবাহনী লিমিটেডের ক্লাবে র‍্যাব অভিযান চালায়। আর পুলিশ অভিযান চালায় নগরের হাং আউট, ফ্রেন্ডস ক্লাব ও শতদল ক্লাবে।

অভিযান পরিচালনাকারী র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ক্যাসিনোসহ সব কটি ক্লাবে কার্ড ও জুয়া খেলার আলামত পাওয়া গেছে। কয়েক দিন ধরে আর খেলা হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম শহরে কোনো ক্লাবে কিংবা জায়গায় জুয়া খেলার সুযোগ নেই। সব ক্লাবে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। দু-একটিতে অভিযানও চালানো হচ্ছে। এত দিন কয়টি ক্লাবে জুয়া চলত, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় বলে জানান পুলিশ কমিশনার। 

গত শনিবার দুপুরে নগরের পাঁচলাইশ থানার প্রবর্তক এলাকার একটি মার্কেটের ষষ্ঠ তলায় ‘গসিপ’ নামের একটি কথিত রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায়, দুই ছাত্র গেম খেলছে। কথা বলে জানা গেল, তারা দশম শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাস চলার সময় এখানে কেন—জানতে চাইলে বলে, তারা স্কুলে যায়নি। টাকার বিনিময়ে গেম খেলছে কি না, প্রশ্ন করা হলে তারা অস্বীকার করে। 

গসিপ নামে রেস্টুরেন্ট হলেও আদতে এখানে কোনো খাবার নেই। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মঈনুদ্দীন রাফি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অনুমোদনসহ যা যা লাগে সবকিছু রয়েছে। স্কুলের সময়ে ভরদুপুরে স্কুলের ছাত্ররা আসতে পারে কি না, প্রশ্ন করা হলে বলেন, স্কুলের সময় কাউকে ঢোকানো হয় না। দুজন বসে গেম খেলছে বলা হলে তিনি বলেন, ‘দেখছি।’ এখানে মাদক গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই দাবি করেন মঈনুদ্দীন রাফি। খাবার টেবিলের আরেক পাশে একটি বিলিয়ার্ড বোর্ড, চকার, নিশানা ফলকসহ খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম দেখা যায়। 

একই ভবনের চতুর্থ তলায় ‘ক্লাব ৩৭’–এ গিয়ে দেখা যায়, বিলিয়ার্ড খেলছেন কয়েকজন তরুণ। ক্লাবটির মালিক জয়ন্ত দাশ বলেন, তাঁদের এখানে মাদকসহ অন্য কোনো কিছুর সুযোগ নেই। জুয়া খেলতে দেওয়া হয় না। 

পুলিশ সূত্র জানায়, নগর পুলিশের বেশ আগে করা তালিকায় ৩২টি জুয়ার আসরের নাম রয়েছে। এখন এই সংখ্যা শতাধিক। নগরের কোতোয়ালি, সদরঘাট, ডবলমুরিং, আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, চকবাজার, জিইসি মোড়, বাকলিয়া, ইপিজেড, বন্দর ও পতেঙ্গা এলাকায় এসব ক্লাবের অবস্থান।

ক্লাবগুলোতে জুয়ার পাশাপাশি অনুমোদনের বাইরে অবৈধ মদ কেনাবেচারও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর জামালখান সিনিয়র্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিদেশি মদ উদ্ধার করেছিল র‌্যাব। ওই সময় র‍্যাব সাংবাদিকদের জানায়, ক্লাবে গোপন তিনটি স্টোররুম পাওয়া গেছে। ক্লাবটির যতটুকু মদ বিক্রির অনুমোদন রয়েছে, বিক্রি করছে তার চেয়ে বেশি।

২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর মদ্যপ অবস্থায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও আলোচিত পরিবহননেতা মঞ্জুরুল আলম নগরের আউটার স্টেডিয়ামসংলগ্ন অফিসার্স ক্লাব থেকে বেরিয়ে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে যুবলীগ নেতা জয়নাল আবেদীনের পায়ে গুলি করেন। ঘটনার দিন দুজনই ওই ক্লাবে ছিলেন। সেখানে দুজন ঝগড়া করতে করতে বের হন। পরে পুলিশ মঞ্জুরুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। দলীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় আহত জয়নাল থানায় কোনো মামলা করেননি। আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা জয়নাল দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নেতা।

আবাহনী লিমিটেড চট্টগ্রামের মহাসচিব সরকারদলীয় হুইপ শামসুল হক চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের ক্লাবগুলোতে তাস খেলা হয়; জুয়া হয় না। এখানে ক্যাসিনো নেই।