Thank you for trying Sticky AMP!!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মভঙ্গে প্রাধ্যক্ষরা

নিয়ম অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষদের সপ্তাহে অন্তত একদিন রাত নয়টায় আকস্মিকভাবে হল পরিদর্শন করার কথা। পাশাপাশি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হাজিরাও ডাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই নিয়ম শুধু কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ। এ রকম নানা অব্যবস্থাপনায় চলছে সব কটি হল।

বর্তমানে ১০টি হলে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। সব কটি ছাত্র হলেই ছাত্রলীগের একক আধিপত্য। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে বিভিন্ন ছাত্র হলে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে।

সূত্র জানায়, প্রাধ্যক্ষদের মধ্যে মাত্র তিনজন ক্যাম্পাসে বাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা বলছেন, আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষেরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। সপ্তাহে অন্তত একদিন রাতে হল পরিদর্শন করার কথা থাকলেও—তাঁরা কখনো এই কাজ করেছেন বলে শোনা যায় না। পাশাপাশি হলের আবাসিক শিক্ষকেরাও নিয়মিত হল তদারকি করেন না। এমনকি কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটলেও তাঁদের পাওয়া যায় না।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্য, বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর তাঁরা আরও তৎপর হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য শিরীণ আখতার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে ইতিমধ্যে হলগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাধ্যক্ষেরা এখন থেকে হলে নিয়মিত তদারকি করবেন।

নিয়ম মানে না হল কর্তৃপক্ষ

১৯৯৩ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২৭৫তম সভায় ছাত্রছাত্রীদের জন্য আচরণবিধি তৈরি করা হয়। সেখানে প্রাধ্যক্ষদের দায়িত্ব সম্পর্কেও একটি ধারা ছিল। সেই ধারায় বলা হয়, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের হাজিরা ডাকার নিয়ম যথাসম্ভব কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত একদিন রাত আনুমানিক নয়টায় কর্তৃপক্ষ আকস্মিকভাবে হল পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের নিজ কক্ষে উপস্থিতি তদারকি করবে। চার সপ্তাহের মধ্যে একবারও কোনো শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে পাওয়া না গেলে তাঁর আসন বাতিল করা হবে।

>

সপ্তাহে এক দিন হল পরিদর্শন ও শিক্ষার্থী হাজিরা ডাকার বিধান রয়েছে
কিন্তু একেবারেই মানা হচ্ছে না

তবে শিক্ষকেরা বলছেন, এই নিয়ম কখনো মানা হয়নি। রাত নয়টায় হল কর্তৃপক্ষ কখনো আকস্মিক পরিদর্শনে যায়নি। কারও আসনও বাতিল করা হয়নি। তবে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হলে কখনো কখনো হলগুলোতে তল্লাশি চালানো হয়। তবে হলে হাজিরা ডাকা হয়েছে এমন নজির নেই। এসবের পাশাপাশি হল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে—এমনটিও অধ্যাদেশে বলা হয়েছে। সেটিও হয়নি। যদিও প্রতিবছর হলকেন্দ্রিক বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়।

হলগুলোতে ছাত্রলীগের আধিপত্য

বিভিন্ন ছাত্র হল ঘুরে অব্যবস্থাপনার নানা চিত্র দেখা গেছে। আবদুর রব হলে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং জীববিজ্ঞান অনুষদের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের থাকার কথা। কিন্তু এই হলে সমাজবিজ্ঞান, কলাসহ আরও কয়েকটি অনুষদের শিক্ষার্থী থাকছেন। আলাওল হলে প্রতিবছরই সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এই হলেও অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীরাও অবস্থান করছেন। ‘অবৈধভাবে’ যাঁরা থাকছেন প্রায় সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

হলগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, হল ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা রয়েছে। কখন কে হলে উঠবে সেটি যেন হল কর্তৃপক্ষ নয়, ছাত্রলীগের নেতারাই ঠিক করেন। হল কর্তৃপক্ষ মেধা তালিকার ভিত্তিতে যে ফলাফল প্রকাশ করে—তার বাইরেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইচ্ছেমতো শিক্ষার্থী তোলেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের তদারকিতে মাসে একবারও হলে আসেন না প্রাধ্যক্ষেরা। অফিস কক্ষে এসে নথিপত্রে স্বাক্ষর করে চলে যান। কখনো হাজিরা ডাকা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে চতুর্থ বর্ষের দুই শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষাজীবনে হলে কখনো তাঁদের এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। আধিপত্যের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বগিভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ রয়েছে। বগি রাজনীতির কারণেই এক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অন্য হলে থাকার সুযোগ পান। তাই এখন হলকেন্দ্রিক রাজনীতির চর্চা করা হচ্ছে।

প্রাধ্যক্ষ কমিটির আহ্বায়কের ভাষ্য

মাস্টারদা সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রাধ্যক্ষ কমিটির আহ্বায়ক খালেদ মিসবাহুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রাতে আকস্মিকভাবে হল পরিদর্শন কেউ করেন না। হল পরিদর্শনে করতে লোকবল দরকার। প্রশাসনের সাহায্য দরকার। ক্যাম্পাসের বাইরে বসবাসকারী প্রাধ্যক্ষদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা নেই। আর হলে হাজিরাও ডাকা হয় না। কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয় তাহলে এসব কাজ করা যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই সিনেট সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, কর্তৃপক্ষ নিয়মিত তদারকি না করায় হলগুলোতে ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্তৃত্ব তৈরি হয়েছে। এর ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিছুটা অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। আর এ রকম পরিস্থিতি থেকেই বুয়েটের মতো ঘটনার জন্ম হয়।