Thank you for trying Sticky AMP!!

‘চোরাচালান ছেড়ে দেওয়ার কারণেই বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা’

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত আনোয়ার হোসেন। ২ আগস্ট জকিগঞ্জ থানায়।

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় ২ আগস্ট পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত আনোয়ার হোসেনের মা দাবি করেছেন, তাঁর ছেলে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাজউদ্দিনের অধীনে মাদক চোরাচালানের কাজ করতেন। সেই কাজ বাদ দেওয়ার কারণে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।

ওই ঘটনায় আনোয়ারের মা মা রুবি বেগম গত সোমবার সিলেটের পদস্থ পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। আজ মঙ্গলবার অভিযোগটি তিনি ডাকযোগে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) দপ্তর, মানবাধিকার সংস্থাসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছেন।

রুবি বেগমের বাড়ি সুলতানপুর ইউপির গঙ্গাজল খাদিমান গ্রামে। আনোয়ার তাঁর একমাত্র সন্তান ছিলেন। আনোয়ার নিহতের পর থেকে তিনি আতঙ্কে বাড়িছাড়া অবস্থায় আছেন বলে জানিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে রুবি বেগম বলেছেন, সীমান্ত এলাকায় পণ্য পরিবহনে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতেন আনোয়ার। এ কাজ করতে গিয়ে আনোয়ার ইউপি সদস্য তাজউদ্দিনের মাধ্যমে মাদক চোরাচালানের বাহকের কাজে জড়িয়ে পড়েন। এ কারণে জকিগঞ্জ থানায় আনোয়ারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। কিন্তু তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। বিষয়টি জেনে আনোয়ারকে বুঝিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মাদক চোরাচালানের কাজ থেকে বিরত রাখেন রুবি। আগের মতো আনোয়ার কাজে যাচ্ছেন না দেখে তাজউদ্দিন একাধিকবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন আনোয়ার আর কাজ করবেন না বলে তাজউদ্দিনকে সাফ জানিয়ে দেন। এ কারণে তাজউদ্দিন ক্ষুব্ধ হন। ২ আগস্ট জকিগঞ্জ থানা–পুলিশের একটি দল দুপুরের দিকে বাড়ি থেকে আনোয়ারকে ধরে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে রুবি থানায় গিয়ে তাজউদ্দিনকে জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আবদুন নাসেরের সঙ্গে দেখতে পান। পরদিন ভোরে বন্দুকযুদ্ধে আনোয়ারের নিহতের খবর পান।

রুবি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পুত যখন বুঝতে পারছে, তখন তাজুল মেম্বারের লগ ছাড়ি দেয়। তাজুল মেম্বারের সব কুকীর্তি ফাঁস অইব দেইখা ঘটনাটা ঘটানো অইছে। এই খুনের বিচার চাই আমি।’

লিখিত অভিযোগে রুবি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমার ছেলের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হওয়ায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে আগে মাসোয়ারা নিত পুলিশ। কিন্তু ছয় মাস ধরে পেশা ছেড়ে দেওয়ায় মাসোয়ারা বন্ধ করে দেয় আনোয়ার। তখন মাদক চোরাচালানের তথ্য প্রকাশ হওয়ার ভয়ে আনোয়ারকে হত্যা করা হয়। তাজন মেম্বার ষড়যন্ত্র করে আমার একমাত্র ছেলেকে হত্যা করেছে।’

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য তাজউদ্দিন বলেন, তিনি মাদক চোরাচালানে জড়িত নন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, কোনো অভিযোগও নেই। আনোয়ারকে তিনি চিনতেন না। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর তাঁর সম্পর্কে জেনেছেন।

আনোয়ারকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরদিন সন্ধ্যাবেলায় তাঁকে থানায় রুবি বেগম দেখেছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাজউদ্দিন বলেন, ‘কিছু জানছি পরে। রাইত তিনটার সময় পুলিশ ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। জনপ্রতিনিধি হওয়ায় সাক্ষী রেখেছে তারা (পুলিশ)। আনোয়ার আমার কামকাজ করত, এইটাও মিথ্যা। তবে এইটা ঠিক, ওই সময় আমি থানায় আছলাম একটা মামলার কাজে। তাঁদের (রুবি) পাশের বাড়ির একজনের বিরুদ্ধে মামলা আছিল। সেই মামলার বিষয়ে জানতে থানায় গেছিলাম। কিন্তু আনোয়ারের বিষয়ে কিচ্ছু জানতাম না। জানলে তো একজন মুসলমান হিসেবে উদ্যোগ নিতাম।’

কী উদ্যোগ নিতেন, জানতে চাইলে তাজউদ্দিন বলেন, ‘আমি জনপ্রতিনিধি। একটা কিছু তো করতা পারতাম।’

জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. লুৎফুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার দুই সপ্তাহ পর এ রকম অভিযোগ তোলা উদ্দেশ্যমূলক। ঘটনা যা ছিল, তা পুলিশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশ করেছে। এর বাইরে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’

ওই ঘটনার পর জেলা পুলিশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, মাদক চোরাচালান ও বিভিন্ন মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আনোয়ারকে ২ আগস্ট রাতে আটক করা হয়। রাতেই তাঁকে নিয়ে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায় পুলিশ। দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে সুলতানপুরের অজোগ্রামে অভিযানকালে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আনোয়ারকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে জকিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এত দিন পর ছেলে হত্যার বিচার চাওয়ার বিষয়ে রুবি বেগম বলেন, তিনি ঘটনার পর থেকে এসব কথা বলে আসছিলেন। কিন্তু কেউ শুনছিলেন না। কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা নিহতের ঘটনার পর সাহস করে তিনি বিচার দাবি করছেন। তিনি বলেন, ‘হেই ঘটনার (সিনহা হত্যা) মতো আমার ঘটনা না অইলেও মায়ের কোলটাও একই রকম খালি অইছে।’

পরিবার সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারের বয়স যখন ৫ বছর, তখন রুবির স্বামী সিদ্দেক আলী মারা যান। ১০ বছর বয়স থেকে শ্রমিকের কাজ করে আনোয়ার সংসার চালাচ্ছিলেন। আনোয়ারের ৯ মাস বয়সী এক ছেলেসহ তিন সন্তান ও স্ত্রী রয়েছে।