Thank you for trying Sticky AMP!!

ছদ্মবেশী পলাতক আসামি ধরতে পুলিশও ছদ্মবেশে

গ্রেপ্তারের পর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা ভারতীয় মদসহ কনাই মিয়া। গতকাল সকালে জেলা পুলিশের মাদকবিরোধী সেলে। প্রথম আলো

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তিনি। ২৪ বছর ধরে পলাতক। এর মধ্যেই ছদ্মবেশে মাদক ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে পুলিশ বিভিন্ন কায়দায় অভিযান চালিয়েও তাঁকে ধরতে পারছিল না। গত ২৫ আগস্ট তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৫০ বোতল ভারতীয় মদ পেলেও তাঁকে পায়নি পুলিশ। তবে এতে দমে না গিয়ে নতুন কৌশল নেয় পুলিশ। বোরকা পরে বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁকে ধরে পুলিশ। বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ২০ বোতল ভারতীয় মদ।

বোরকায় ধরা পড়া ছদ্মবেশী এই মাদক ব্যবসায়ী হচ্ছেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের দত্তপাড়ার কটাই মিয়া (৪৫)। তাঁর পুরো নাম আবদুস সত্তার। গত মঙ্গলবার বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার সিলেট জেলা পুলিশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কটাই নামে পরিচিত আবদুস সত্তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন পলাতক আসামি। বিয়ানীবাজার থানায় একটি হত্যা মামলার রায়ে ১৯৯৫ সালের ১৮ মার্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। ওই সময় থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে দফায় দফায় ব্যর্থ হয়। বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে যে কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে ছদ্মবেশে মাদক ব্যবসা করছেন কটাই।

সম্প্রতি জেলা পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে ঝটিকা অভিযান শুরু করলে কটাইকে গ্রেপ্তারে আবারও চেষ্টা শুরু হয়। পলাতক থাকা অবস্থায় কটাইয়ের বসবাসের বাড়িটি শনাক্ত করে পুলিশ। গত ২৫ আগস্ট বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। বাড়ি থেকে ৫০ বোতল ভারতীয় মদ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু অভিযানের সময় ছদ্মবেশ ধরে পালান কটাই। এরপর ‘পুলিশের মাদকবিরোধী সেল’ তাঁকে ধরতে টানা অভিযানে নামে। ১০ দিন নানা সূত্রের মাধ্যমে কটাইয়ের ছদ্মবেশ ধরা ও মাদক চোরাচালানের ধরন সম্পর্কে অবহিত হয়ে গত মঙ্গলবার মাদকবিরোধী সেলের অফিসার ইনচার্জ সজল কুমার কানুর নেতৃত্বে অভিযান হয়। দুপুরবেলায় এ অভিযানের প্রথম ভাগে দুজন পুলিশ সদস্য বোরকা পরে নারী সেজে কটাইয়ের বাড়িতে যান। তাঁরা কটাইয়ের সঙ্গে দেখা করার কৌশলে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন। বোরকা পরা দুজন পুলিশ সদস্যের সহায়তায় মাদকবিরোধী সেলের অন্য পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন।

বিয়ানীবাজারের দত্তপাড়ার সাজ্জাদ আলীর ছেলে কটাই। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর। ওই সময় থেকে ছদ্মবেশে চলাফেরা করতেন তিনি। পলাতক অবস্থায় বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। প্রতিবেশীদের মাধ্যমে মুঠোফোনে কটাইয়ের পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। যে মামলায় কটাই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিয়ে আছেন, এ বিষয়ে প্রতিবেশী কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।

দুজন প্রতিবেশী জানান, বাড়িটি যে কটাইয়ের বলে জানতেন সবাই। কিন্তু লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল তাঁর চলাফেরা। রাতে বাড়িতে না থেকে দিনের বেলায় বাড়িতে থাকতেন কটাই। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দিনের বেলায় বিচ্ছিন্নভাবে বোরকা পরা কিছু লোক যোগাযোগ করত। মাদক ব্যবসায় এ যোগাযোগ হতো বলে ধারণা প্রতিবেশীদের। তা দেখে হয়তো পুলিশ এ কৌশলে কটাইকে ধরতে সক্ষম হয়।

নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আহমদের নির্দেশে এ অভিযান হয়েছে উল্লেখ করে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ছদ্মবেশে দুর্ধর্ষ ছিলেন কটাই মিয়া। বলতে গেলে প্রায় দুই যুগ তিনি পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছিলেন। তাঁর সম্পর্কে যাবতীয় খোঁজখবর নিয়ে পুলিশের কৌশলী অভিযানে সফলতা এসেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, কাটাই মিয়াকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ২৫ আগস্ট তাঁর বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানায় মাদক আইনে একটি এবং গত মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তারকালে আরও মাদক উদ্ধারের পর আরও একটি মামলা হয়েছে।