Thank you for trying Sticky AMP!!

জয়পুরহাটে থেমে নেই কিডনি বিক্রির প্রবণতা

জয়পুরহাটের কালাইয়ে কিডনি কেনাবেচার ঘটনায় বেশ কিছু মামলা হয়। কয়েকজন মধ্যস্বত্বভোগীকে (দালাল) গ্রেপ্তারও করা হয়। পাশাপাশি কিডনি বিক্রি বন্ধে সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ ও লিফলেটও বিতরণ করা হয়। এরপরও থেমে নেই কিডনি বিক্রির প্রবণতা। এবার কিডনি বিক্রির অভিযোগে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে কালাই থানা-পুলিশ।

গত বুধবার রাতে উপজেলা উলিপুর গ্রাম থেকে খাজামুদ্দিন (৪০) ও তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে। এক বছর আগে নাজমা তাঁর কিডনি বিক্রি করেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগী ছিলেন তাঁর স্বামী খাজামুদ্দিন। কালাই উপজেলার ২০-২৫টি গ্রামের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নতুন করে কিডনি বিক্রি করেছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। তবে এর কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিডনি বিক্রির সঠিক হিসাব জানলেও কালাইয়ে কিডনি বিক্রির প্রবণতা থেমে নেই।

জানতে চাইলে কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ খান গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, কিডনি বিক্রির ঘটনায় ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত চার বছরে কালাই থানায় সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৬২ জন আসামি রয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের কেউ পলাতক রয়েছেন, কেউ আবার জামিনে রয়েছেন। কিডনি বিক্রি হচ্ছে অত্যন্ত কৌশলে। থানা-পুলিশ কিডনি কেনাবেচা রোধে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ওসি বলেন, গত বুধবার উপজেলার উলিপুর গ্রাম থেকে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বামী নিজে কিডনি বিক্রি করেননি। তিনি তাঁর স্ত্রীকে কিডনি বিক্রি করতে প্রলুব্ধ করেছিলেন। এক বছর আগে তাঁর স্ত্রী কিডনি বিক্রি করেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কিডনি বিক্রির একাধিক চক্র রয়েছে। ঢাকা থেকেই কালাইয়ের কিডনি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তুলনামূলক অভাবগ্রস্ত গ্রামকে বেছে নিচ্ছে চক্রটি। পরে ওই চক্র গ্রামগুলোতে স্থানীয় দালাল নিয়োগ করছে। দালালেরা আবার ওই গ্রামগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে যে পরিবার বেশি অভাবগ্রস্ত তাদের টার্গেট করছে। দালালেরা এসব পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করছে। একপর্যায়ে দালালেরা তাঁদের কিডনি বিক্রির প্রস্তাব দেন। কিডনি বিক্রির টাকায় গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রলোভন দিয়ে দালালেরা তাঁদের কিডনি বিক্রিতে রাজি করাচ্ছেন। পরে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে কিডনির দামদর ঠিকঠাক করছেন। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিকঠাক করার পর ঢাকা ও পাশের দেশ ভারতে নিয়ে তাঁদের কিডনি নেওয়া হচ্ছে। নতুন করে কিডনি বিক্রির নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠা গ্রামগুলো হচ্ছে উলিপুর, সাতার, ভেরেন্ডি, কুসুমসাড়া, ভাউজাপাতার, অনিহার, পাইশ্বর, শিবসমুদ্র, ছত্রগ্রাম, ইন্দাহার, মোহাইল, বহুতি, থল, বাগইল, জয়পুর বহুতি, মাস্তর, দুর্গাপুর, নওয়ানা বহুতি, উত্তর তেলিহার, কাশিপুর, ভুষা, বিনইল, পূর্ব শ্রীকৃষ্টপুর, বোড়াই, হারুঞ্জা, নওপাড়া, বালাইটগ্রাম, থুপসারা, রাঘবপুর, নওপাড়া। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে উলিপুর গ্রাম থেকে দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন-১৯৯৯-এর ৯ ধারায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একই আইনের ১০ (১) ধারা অনুযায়ী কেউ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি বা ক্রয় বা সহায়তা করলে সর্বনিম্ন তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। শাস্তির বিধান অক্ষুণ্ন রেখে ২০০৯ সালে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনেও এটি সংযোজন করা হয়। বছর ছয়েক আগে কালাইয়ে কিডনি বিক্রির নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিডনি কেনাবেচা রোধে সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পরও কিডনি কেনাবেচা বন্ধ হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিডনি বিক্রি করা দুই ব্যক্তি বলেন, ‘সংসারে অভাব ছিল। সচ্ছলতা ফেরাতে দালালের মাধ্যমে গোপনে কিডনি বিক্রি করেছি। এখন সংসারের সচ্ছলতা ফেরা তো দূরের কথা, নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’

কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান বলেন, আগের মতো এখন আর মানুষ না খেয়ে থাকে না। দালালদের খপ্পরে পড়ে কিডনি বিক্রির মতো ভয়ংকর কাজে জড়াচ্ছে মানুষ। স্বামী-স্ত্রী দুজনই কিডনি বিক্রি করেছেন। এ রকম ঘটনা অহরহ রয়েছে। গত দুই বছর কতগুলো মানুষ কিডনি বিক্রি করেছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিডনি বিক্রির সঠিক তথ্য জানা নেই। তবে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রতারণার পরও কিডনি বিক্রি থেমে নেই।