Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকার ২২ মাদক স্পটের নিয়ন্ত্রণ ২৫ নারী ব্যবসায়ীর হাতে

>

• ২৫ নারীর সবাই পুলিশের তালিকাভুক্ত
• ২৫ নারীর বিরুদ্ধে ৪ থেকে ২২টি করে মামলা
• জামিনে বেরিয়ে এই নারীরা মাদক ব্যবসা করছেন
• রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ

রাজধানীর ২২টি মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করছেন ২৫ নারী মাদক ব্যবসায়ী। তাঁদের একেকজনের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪ থেকে ২২টি করে মামলা। অধিকাংশই জামিনে বেরিয়ে মাদক ব্যবসা করলেও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করছে না।

একাধিক মাদক স্পটের আশপাশের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের কিছু নেতা তাঁদের ব্যবহার করছেন নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত বলে। আর এসব নারী থানা–পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করেই মাদক ব্যবসা করছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মাদক ব্যবসায় জড়িত পুরুষ কিংবা নারী যে–ই হোক না কেন, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

মাদকের কয়েকটি স্পট ঘুরে এবং পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব নারীর সবাই পুলিশের তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে দয়াগঞ্জ রেললাইনের পাশে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন রহিমা খাতুন ও সুফিয়া আক্তার ওরফে সুফি। রহিমা ও সুফিয়ার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় পাঁচটি করে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা আছে। রহিমার বিরুদ্ধে গেন্ডারিয়া থানায় একটি ও সুফিয়ার বিরুদ্ধে শ্যামপুর থানায় একটি মামলা আছে।

দয়াগঞ্জের এক বাসিন্দা জানান, রহিমা ও সুফিয়ার নিয়োগ করা লোকেরা সকাল–সন্ধ্যায় রেললাইনের পাশে ইয়াবা বড়ি ও হেরোইন বিক্রি করে। এক বছর আগে যাত্রাবাড়ী থানা–পুলিশ ইয়াবা ও হেরোইনসহ রহিমাকে এবং আট মাস আগে সুফিয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল। এর কিছুদিনের মাথায় তাঁরা কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, রহিমা ও সুফিয়া যাত্রাবাড়ী থানার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হলেও প্রতিবার তাঁরা জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

পল্লবীর দুয়ারীপাড়া বস্তির মাদক ব্যবসা করেন সালেহা বেগম। তাঁর বিরুদ্ধে রূপনগর থানায় ২১টি ও পল্লবী থানায় একটি মামলা আছে।

দুয়ারীপাড়া বস্তিতে গেলে আশপাশের বাসিন্দারা জানান, সালেহার সহযোগীরা এলাকায় ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজার ব্যবসা করেন। তবে সালেহাকে এখন প্রকাশ্যে কম দেখা যায়। জানতে চাইলে রূপনগর থানার ওসি শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সালেহার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তবে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না।

ভাষানটেকের সাগরিকা বস্তি ও ভাষানটেকের ১ নম্বর বস্তির মাদক নিয়ন্ত্রণ করেন মোরশেদা। মোরশেদার বিরুদ্ধে থানায় ১১টি মাদকের এবং একটি চাঁদাবাজির মামলা আছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, সাগরিকা বস্তির মাদক ব্যবসার মদদ দিচ্ছেন নুর হোসেন খান। মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগের পর তাঁকে ভাষানটেক থানা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ভাষানটেক থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মোরশেদাকে পুলিশ খুঁজছে, তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।

ভাষানটেকের ধামালকোট মাঠসংলগ্ন বস্তিতে ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করেন স্বপ্না। ভাষানটেক থানায় স্বপ্নার বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।

মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের একাংশের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন ফারহানা আক্তার ওরফে পাপিয়া। পাপিয়ার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় চারটি মামলা আছে। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাপিয়া কারাগারে আছেন।

সবুজবাগের ওহাব কলোনির ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করেন শামসুননাহার চম্পা, সুফিয়া আক্তার শোভা ও তানিয়া বেগম। শামসুননাহারের বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় ১১টি, সুফিয়ার বিরুদ্ধে ১০টি ও তানিয়ার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা আছে।

অভিযোগের বিষয়ে শামসুননাহার চম্পা প্রথম আলোকে বলেন, আগে ওহাব কলোনির মাদক ব্যবসায়ী মাফির সঙ্গে তিনি মাদক ব্যবসা করতেন। এখন তিনি মাদক ব্যবসা করেন না বলে দাবি করেন। ওহাব কলোনিতেও যান না। কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুরে মাদক ব্যবসায় যুক্ত শাহিনুর বেগম ওরফে দিনারা ওরফে মিনারা ও শাহনাজকে ফোন করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি।

ওহাব কলোনির কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, তাঁরা তরুণদের কাছে ফেরি করে ইয়াবা বড়ি বিক্রি করেন। সবুজবাগ থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকির প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ১৮টি ঘরে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁরা এলাকায় আসেন না।

কমলাপুর রেলস্টেশনের আশপাশে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করেন জমিলা খাতুন। ইয়াবা বেচাকেনার অভিযোগে জমিলার বিরুদ্ধে মতিঝিল,
শাহজাহানপুর, মুগদা থানায় পাঁচটি মাদকদ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে।

কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে থাকেন সিজ্জিল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশন–সংলগ্ন প্রধান সড়কের ফুটপাতে জমিলার সহযোগীরা ফেরি করে ইয়াবা বড়ি বিক্রি করেন। আগে ঢাকা জিআরপি থানার পেছনে, কমলাপুর রেলস্টেশন–সংলগ্ন বাজারের কাছে ইয়াবা বড়ি বেচতেন।

খিলক্ষেত বাজারের কাছে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন নাজমা বেগম। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে ১৮টি মামলা আছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যে মাদক ব্যবসা করছেন, সেটা ঠিক। তবে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর তাঁরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এ কারণে প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচাও কমে গেছে।