Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

ফাইল ছবি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট বিক্রির টাকা সরকারি হিসাবে জমা না দিয়ে নিজদের পকেটে পুরেছেন প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মচারী। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এভাবে তাঁরা প্রায় ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক অনুসন্ধানে এ বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ (বরখাস্ত) মো. আজিজুল হক ভুইয়া (বর্তমানে প্রশাসনিক বিভাগে সংযুক্ত) জরুরি বিভাগ থেকে ৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬৬৮টি টিকিট গ্রহণ করে ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮৫ টাকায় বিক্রি করেন। পরে তিনি এসব টিকিট বিক্রির টাকার মধ্যে ৬৬ লাখ ১৫ হাজার ৯৩০ টাকা সরকারি খাতে জমা করলেও বাকি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৫ টাকা জমা করেননি।

অপরদিকে, তিনি জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি করে ৩৮ লাখ ৩৮ হাজার ২২৭ টাকা আদায় করেন। এর মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন ২৩ লাখ ৪৭ হাজার ২৮১ টাকা। এখানেও তিনি ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৪৬ টাকা জমা দেননি বলে অনুসন্ধানে দেখা গেছে। আজিজুল হক দুই খাত থেকে মোট ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৬০১ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ এবং সংশ্লিষ্ট আলামত নষ্ট করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে ২০১১ সালে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়। পরে হাসপাতালের দুটি তদন্ত কমিটিও আত্মসাতের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।
হাসপাতালের সাবেক অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক ও ক্যাশিয়ার মো. শাহজাহান ২০০৯ থেকে ২০১০ সালে জরুরি বিভাগে কর্মরত অবস্থায় ১৫ হাজার টিকিট বিক্রি করেন। টিকিট বিক্রির দেড় লাখ টাকা সরকারি খাতে জমা না দিয়ে আলামত নষ্ট করে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেন।

একইভাবে সাবেক এমএলএসএস মো. আবু হানিফ ভুইয়া ২০০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২৮ হাজার টিকিট বিক্রি করে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।
জরুরি বিভাগের অফিস সহকারী মো. হারুনর রশিদ ২০০৯-১০ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১ লাখ ১৫ হাজার টিকিট বিক্রি করে ১১ লাখ ৫০ হাজার আত্মসাৎ করেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
সাবেক এমএলএসএস, বর্তমানে ক্যাশিয়ার মো. আলমগীর হোসেন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ২৮ হাজার টিকিট বিক্রি করে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা গেছে।

দুদকের প্রতিবেদন বলছে, সাবেক এমএলএসএস ও বর্তমানে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আবদুল বাতেন সরকার জরুরি বিভাগে ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গত ২০০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১ লাখ টিকিট বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এভাবে এই ছয় কর্মচারী মোট ৫৯ লাখ ১০ হাজার ৬০১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অনুসন্ধানে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. নূরুল ইসলাম সম্প্রতি দুদকে এ প্রতিবেদন জমা দেন। তাঁর প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এ ঘটনায় মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শিগগিরই এ বিষয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করা হবে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, একই ধরনের অভিযোগে কক্সবাজার জেনারেল হাসপাতালে, বান্দরবান জেনারেল হাসপাতাল, নেত্রকোনা সদর হাসপাতাল, যশোর ৫০ শয্যা হাসপাতাল ও বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই ওই সব অভিযোগ নথিভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

তবে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মাতুয়াইল শিশু মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, রংপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মচারীদের বিরুদ্ধ অনুসন্ধান চলছে। এসব হাসপাতাল থেকে নথিপত্র সংগ্রহ, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ ও পর্যালোচনার পর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুদক।