Thank you for trying Sticky AMP!!

তরুণীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন

নরসিংদী শহরের বীরপুরে ফুলন রানী বর্মণ (২০) নামের এক তরুণীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুই দুর্বৃত্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে পৌর এলাকার বীরপুরের বর্মণপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। ছবিটি নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তোলা। ছবি: প্রথম আলো।

নরসিংদী শহরের বীরপুরে ফুলন রানী বর্মণ (২০) নামের এক তরুণীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুই দুর্বৃত্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে পৌর এলাকার বীরপুরের বর্মণপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। অগ্নিদগ্ধ ফুলন রানী বর্মণ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তাঁর শরীরের ২০ ভাগের বেশি পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।

ফুলন নরসিংদী পৌর এলাকার বীরপুরের যুগেন্দ্র বর্মণের মেয়ে। গত বছর নরসিংদীর উদয়ন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও আর্থিক দুরবস্থার কারণে কোথাও ভর্তি হতে পারেননি। ফুলনের বাবা যুগেন্দ্র বর্মণ দলিল লেখকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন।

পুলিশ ও অগ্নিদগ্ধ তরুণীর পরিবারের সদস্যরা জানান, সন্ধ্যার পর শাজাহান মোক্তার নামে ফুলনের বাবার এক সহকর্মী কাজের সূত্রে তাঁদের বাড়িতে আসেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফিরে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে কেক কিনতে যান ফুলন। কেক কিনে ও মোবাইল ফোনে রিচার্জ করে রেললাইন পার হয়ে বাড়ির গলির মুখে পৌঁছার পর চলে যান শাজাহান মোক্তার। নির্জন আর অন্ধকার গলি ধরে একা বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি।

বাড়ির কাছে চলে আসার পর দুই দুর্বৃত্ত ফুলনের হাত ও মুখ চেপে ধরে খোলা একটি জায়গায় নিয়ে আসে। দুর্বৃত্তদের একজন তাঁর মুখ চেপে ধরে রাখে, আর অন্যজন তাঁর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ফুলনের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। উপস্থিত ব্যক্তিরা পানি ও চটের বস্তা চাপা দিয়ে তাঁর শরীরের আগুন নেভান। তাঁকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সঞ্জীব রায় নামের সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছে পুলিশ। ফুলনের বড় ভাইয়ের শ্যালক সঞ্জীব। তিনি রায়পুরা থানা–সংলগ্ন মিলন মন্দির এলাকার ননী গোপাল রায়ের ছেলে। দুই বছর ধরে ফুলনকে উত্ত্যক্ত করতেন সঞ্জীব। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক আবদুল গাফফার গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই রায়পুরায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করেন।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ফুলন জানান, কেক কিনে অন্ধকার গলি দিয়ে বাড়িতে ফেরার সময় দাঁড়িয়ে থাকা দুজনকে সিগারেট খেতে দেখেন তিনি। এ সময় একটু ভয় পেয়ে দ্রুত পা চালান ফুলন। কিন্তু ওই দুজন দৌড়ে গিয়ে তাঁর মুখ চেপে ধরে শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেয়। এরপর দেশলাইয়ের কাঠি জ্বেলে তাঁর দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। আগুন ধরে যাওয়ার পর তিনি চিৎকার করতে থাকলে তারা পালিয়ে যায়। অন্ধকারে তাদের চিনতে পারেননি ফুলন।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. নাসিম আল ইসলাম জানান, ফুলনের শরীরের ২০ ভাগের বেশি পুড়েছে। দাহ্য পদার্থ দিয়ে তাঁকে পোড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁর দুই বাহু ও পেছনের অংশ বেশি পুড়েছে। অবস্থা সংকটপূর্ণ হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান জানান, কারা কী কারণে ফুলনের গায়ে আগুন দিল, কিছুই বলতে পারছে না তাঁর পরিবার। ঘটনাস্থল থেকে দাহ্য পদার্থের বোতল, ম্যাচ, মেয়েটির পুড়ে যাওয়া চুলসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। কিনে আনা ওই কেকও ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, ‘এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। খুব দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’