Thank you for trying Sticky AMP!!

তালিকা ধরে ব্লগার খুন!

সরকারের কাছে দেওয়া কথিত ‘নাস্তিক তালিকা’ অনুযায়ী একের পর এক ব্লগারকে হত্যা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তালিকাটি থাকলেও ব্লগারদের নিরাপত্তায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।
তালিকায় থাকা অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। যাঁরা যাননি, তাঁরা আছেন আতঙ্কে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এখন একটাই প্রশ্ন—এরপর কে?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির আগে ব্লগারদের ওই তালিকা করা হয়েছিল। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে দর-কষাকষির অংশ হিসেবে ১৩ মার্চ সরকার নয় সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়। কমিটিতে আইন, তথ্য এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ছিলেন। সেই কমিটির নাম ছিল ‘পবিত্র ইসলাম ধর্ম এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকারী ব্লগার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ কমিটি’। কমিটির প্রধান ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রয়াত অতিরিক্ত সচিব মাইনউদ্দিন খন্দকার। কমিটি ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যকারীদের বিষয়ে তথ্য দিতে একটি ই-মেইলও খুলেছিল।
কমিটি এপ্রিল মাস পর্যন্ত চারটি বৈঠক করে। কমিটি ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যকারীর নাম আহ্বান করলে বিভিন্ন মহল থেকে সব মিলিয়ে ৮৪ জন ব্লগারের একটি তালিকা দেওয়া হয়। সেই তালিকা থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ জন ব্লগারের একটি তালিকা করে কমিটি তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দেয়। সেই তালিকা থেকে হেফাজতের সমাবেশের ঠিক আগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত কমিটির তৃতীয় বৈঠকে আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত নামের একটি সংগঠন ‘নাস্তিকদের তালিকা’ শিরোনামে ৫৬ জনের একটি তালিকা দেয়। এই ৫৬ জনের মধ্যে আবার ২৭ জনকে আলাদা করা হয়। এই ২৭ জনের প্রত্যেকের আলাদা প্রোফাইল তৈরি করে তা কমিটির কাছে দেওয়া হয়। সেখানে ২৭ জনের ছবি ছাড়াও প্রত্যেকের পরিচিতি, ঠিকানা এবং লেখার বিভিন্ন অংশ তুলে ধরা হয়।
জামায়াত-শিবির পরিচালিত একটি ফেসবুক গ্রুপের নাম ‘বাঁশের কেল্লা’। একই সময়ে সেখানে ৮৪ ব্লগারের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় আগের ৫৬ জনের নামও ছিল।
এসব তালিকা থেকেই মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কমিটি ১০ জনের প্রথম তালিকাটি করেছিল। তালিকা তৈরি করে চার ব্লগারকে গ্রেপ্তারের পরও হেফাজতে ইসলাম পূর্বনির্ধারিত ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ডেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পরে সরকারও তা শক্ত হাতে দমন করে। এতে হেফাজতের সঙ্গে সরকারের আর দর-কষাকষির প্রয়োজন হয়নি। ফলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কমিটি ৫ মের পর আর কোনো বৈঠকও করেনি, তালিকাও হয়নি। গ্রেপ্তারকৃত ব্লগাররা পরে জামিন পেলেও এখনো মামলা চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া আনজুমানে আল বাইয়্যিনাতের তালিকায় রাজিব হায়দার ওরফে শোভনের নাম ছিল। ওই তালিকা দেওয়ার আগেই, ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁকে হত্যা করা হয়। এরও আগে একই বছরের ১৪ জানুয়ারি তালিকায় নাম থাকা আরেক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এর পরে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি তালিকায় থাকা মার্কিনপ্রবাসী অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এরপর ঠিক একই কায়দায় হত্যা করা হয় মূলত ফেসবুকে লেখালেখি করা ওয়াশিকুর রহমানকে। তবে কোনো তালিকাতেই ওয়াশিকুরের নাম ছিল না। সবশেষে ১২ মে সিলেটে হত্যা করা হয় ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে। আনজুমানে আল বাইয়্যিনাতের তালিকায় তাঁর নামটি ছিল।
সামগ্রিক বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, তালিকার বিষয়টি তিনি জানতেন না। জেনে ব্যবস্থা নেবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালিকায় থাকা অধিকাংশ ব্লগারই ইতিমধ্যে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। পর পর তিনজন খুন হওয়ার পরও সরকারের পক্ষ থেকে অন্যদের ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আবার তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এখানে এমন অনেকের নাম আছে, যাঁরা নিয়মিত ব্লগে লেখালেখি করলেও ধর্ম নিয়ে কখনো কিছু লেখেননি। কিন্তু ২০১৩ সালে সরকার কমিটি করার পর অতি উৎসাহীরা তালিকা বড় করার জন্য তাঁদের নামও দিয়েছিল। আবার ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণেও কিছু নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।