Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই ভুট্টোই কারাগারে

ঘটনাটি ২০১৪ সালের। চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট এলাকার নির্মাণাধীন একটি ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে দুই বন্ধুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুজনের পায়ের রগ কাটা ছিল। এ ঘটনায় করা মামলায় নয়জনকে আসামি করা হয়। এজাহারে এক আসামির নাম লেখা ছিল ‘ভুট্টো’। তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাম ও ঠিকানা ছিল না। আসামি একজন হলেও গত আড়াই বছরে পুলিশ ‘ভুট্টো’ নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

প্রথম ভুট্টোকে ঘটনার ১৭ দিন পর গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। তাঁর নাম নুরুল আলম ওরফে ভুট্টো। একটি চুরির মামলায় আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন তিনি। আর দ্বিতীয় ভুট্টোকে গত সোমবার গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁর নাম রাসেল ওরফে ভুট্টো। নগরের বার্মা কলোনির এই বাসিন্দা আসবাবের দোকানের কর্মী বলে পুলিশ জানায়।

মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে খুলশী থানার পুলিশ। ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়। কিন্তু আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য গত ১৪ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। আড়াই বছর পর অধিকতর তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই বলছে, নুরুল আলম প্রকৃত আসামি নন। রাসেল ওরফে ভুট্টো প্রকৃত আসামি।

মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক এনামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, জোড়া খুনের ওই ঘটনায় নুরুল আলম ওরফে ভুট্টো জড়িত নন। এ মামলার অন্য আসামিরাও জিজ্ঞাসাবাদে একই কথা বলেছেন। এক আসামির দেওয়া জবানবন্দিতেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আরও কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর নুরুল আলম ওরফে ভুট্টোকে মুক্তি দিতে আদালতে আবেদন করা হবে।

২০১৪ সালের ১৭ মার্চ চট্টগ্রাম নগরের ওমরগণি এম ই এস কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র কামরুল হাসান ও পোশাক কারখানার কর্মী ফোরকান উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁরা দুজন বন্ধু এবং ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। ওই দিনই কামরুলের বাবা মো. হাকিম বাদী হয়ে খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে শাহ আলম, মো. সাহেদ, সাদ্দাম হোসেন, মো. বাহার, জাহাঙ্গীর আলম, আলাউদ্দিন, হানিফ, রমজান, ভুট্টোর নাম ছিল। কিন্তু ভুট্টোসহ তিন আসামির পিতার নাম ও ঠিকানা ছিল অজ্ঞাত।

লাশ উদ্ধারের পরদিন খুলশী থানার পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা পুলিশকে বলেন, গলায় দড়ি পেঁচিয়ে ও পায়ের রগ কেটে খুন করার পর দুজনের লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, ঠিকানা অজ্ঞাত থাকা ভুট্টোকে (নুরুল আলম) গ্রেপ্তার দেখাতে ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল আদালতে আবেদন করেন মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা খুলশী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল মিয়া। বর্তমানে তিনি ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত রয়েছেন। প্রথম ভুট্টোকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নুরুল আলম ভুট্টো চুরির মামলায় আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন। জোড়া খুনের ঘটনার পর যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর নাম বলেছেন। পরে এ মামলায় তাঁকে শ্যোন অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) দেখানো হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন এমন দাবি আসামি নিজে কখনো করেননি বলে দাবি করেন তিনি। ভুট্টোকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না বলে জানান তিনি।

গত মে মাসে পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর মামলার দুই আসামি রমজান ও আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। এজাহারে তাঁদের নাম থাকলেও ঠিকানা ছিল না। দুজনের মধ্যে রমজান গত সোমবার জবানবন্দি দেন আদালতে। এতে তিনি উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডে নুরুল আলম ভুট্টো নয়, রাসেল ভুট্টো অংশ নেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী মো. হাকিম বলেন, ‘আসামির নাম ভুট্টো জানি। গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে কে প্রকৃত আসামি, তা জানি না। এটি পুলিশের তদন্তের বিষয়।’

নুরুল আলম ওরফে ভুট্টোর স্ত্রী রানু বেগম নগরের শান্তি কলোনি এলাকায় থাকেন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী চট্টগ্রাম শহরে রিকশা চালাতেন। পুলিশের এক সোর্সকে টাকা না দেওয়ায় চুরির মামলায় তাঁর স্বামীকে ফাঁসানো হয় বলে দাবি করেন তিনি। পরে খুনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তিনি বলেন, স্বামী গ্রেপ্তারের পর থেকে মানুষের বাসায় কাজ করে কোনোরকমে ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। জামিনের জন্য উকিলের কাছে কয়েকবার গেছেন। কিন্তু উকিলের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই। আসল ভুট্টো গ্রেপ্তার না হলে খুনের মামলায় তাঁর স্বামীর জামিন হবে না বলে উকিল তাঁকে জানান। এ কারণে স্বামীকে কারাগার থেকে ছাড়িয়ে আনতে পারেননি।

রানু বেগম বলেন, ‘আসল ভুট্টো গ্রেপ্তার হয়েছে শুনেছি। এখন ঋণ নিয়ে স্বামীর জামিনের আবেদন করার জন্য আবার উকিলের কাছে যাব।’

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশ না পেলে কোনো আসামিকে মুক্তি দেওয়া যায় না। এরপরও নিরপরাধ কেউ কারাভোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অধিকতর তদন্তের পর দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, নুরুল আলম ভুট্টো নন, রাসেল ওরফে ভুট্টো প্রকৃত আসামি। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা নিরপরাধ ভুট্টোর মুক্তির জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন। তদন্ত শেষে মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ারও আবেদন করতে পারেন।