Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ

ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ এনে বগুড়ায় দুই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে বগুড়ার সাতমাথায় এই কর্মসূচি পালন করেন শেরপুর ও ধুনট উপজেলার ভুক্তভোগীরা।

ওই দুই ভূমি কর্মকর্তা হলেন বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (এসও) আরিফুর রহমান ও মনতাজ আলী।

মানববন্ধন চলাকালে ধুনট ও শেরপুর উপজেলার প্রায় ৪০ জন জমিমালিক উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই ‘ঘুষখোর’ ভূমি কর্মকর্তাদের শাস্তি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন পাঠান। এতে দুই উপজেলার ১৭ জন ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ জমিমালিক স্বাক্ষর করেছেন।

লিখিত আবেদনে ধুনটের তারাকান্দি এলাকার দিদারুল ইসলাম ও সাইদুর রহমান উল্লেখ করেন, উপজেলায় এলাঙ্গী মৌজায় তাঁদের ২০ শতক জমি রয়েছে। এটি তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তি। এই জমিতে তাঁরা ৭০ বছর ধরে বসবাস করছেন। কিন্তু ২০০৯ সালে এই জমির বিরুদ্ধে এলাকার অন্য লোকজনকে দিয়ে আপিল মামলা করান আরিফুর। পরে গোপনে এই মামলার রায় বাদীপক্ষের অনুকূলে দেন। মামলার বাদী মজিবরসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন তাঁরা বলেন, এই মামলা সম্পর্কে মজিবররা কিছু জানেন না। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ১৫০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারও করেন। একই সঙ্গে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে এই আপিলের রায় সংশোধনের অনুরোধ জানান। কিন্তু আরিফুর সেই মামলা সংশোধন করেননি।

দিদারুল ইসলাম ও সাইদুর রহমান আরও উল্লেখ করেন, পরে এ ঘটনায় আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বগুড়া সদরের সেটেলমেন্ট সহকারী কর্মকর্তা মনতাজ আলীকে তদন্তভার দেওয়া হয়। দিদারুল ইসলাম ও সাইদুর রহমানকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে দেড় লাখ টাকা চান মনতাজ আলী। এই টাকা না দেওয়ায় আরিফুরের রায় বহাল রাখেন মনতাজ। এ ঘটনার পর দিদারুল ও সাইদুর ২০১৬ সালে বিষয়টি ভূমি রেকর্ড জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এই প্রেক্ষাপটে এই জমির নথিপত্র জরিপ অধিদপ্তরে নেওয়া হয়।

নথি যাচাই শেষে গত বছরের ১৯ মার্চে ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দ মো. মুজিবুল হক স্বাক্ষরিত এক নোটিশ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘শুদ্ধভাবে রায় না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ অশুদ্ধ রেকর্ড করায় আপনার (আরিফুল) বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?’ কিন্তু এরপর এই ফাইল জেলা সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে চাপা পড়ে যায়। পরে আবার বিষয়টি লিখিতভাবে ভূমি অধিদপ্তরকে জানানো হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের সেপ্টেম্বরে অধিদপ্তর বিষয়টি এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। কিন্তু আরিফুরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আবেদনে ধুনট উপজেলার শৈলমারী এলাকার বাসিন্দা মো. খোদা বক্স অভিযোগ করেন, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে তাঁদের ওয়ারিশ নন, এমন ব্যক্তির নামে রেকর্ড দেওয়া হয়। এটি সংশোধনের জন্য তিনি মামলা করেন। পরে ২০১৬ সালে জমির কাগজপত্র দেখে তাঁর পক্ষে রায় দেওয়া হয়। কিন্তু এর এক বছর পর তিনি জানতে পারেন, এই রায় পরিবর্তন করে প্রতিপক্ষকে দিয়েছেন সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আরিফুর রহমান। একই বিষয়ের দুই ধরনের রায়ের বিষটি নিয়ে পরে তিনি (খোদা বক্স) ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তর খোদা বক্সের পক্ষে পুনরায় রায় দেয়। একই সঙ্গে এক চিঠিতে আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ১০ দিনের মধ্যে কারণ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শেরপুর উপজেলার বাসিন্দা মো. সাইদুজ্জামানও আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ করেন। তিনিও ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

ধুনট উপজেলার জয়নাল আবেদীন অভিযোগ করেন, তাঁর জমি আরিফুর ঘুষ নিয়ে অন্য একজনের নামে রেকর্ড করে দেন। পরে তিনি বিষয়টি সংশোধনের জন্য ধুনট সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে আবেদন করেন। এক বছর হলো এখনো এর কোনো সমাধা হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রতিপক্ষের কাছ থেকে টাকা খেয়ে আরিফুর এই কাজ করেছেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য আমি ভূমি জরিপ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছি।’

মুঠোফোনে জানতে চাইলে সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মনতাজ আলী বলেন, ‘এই মামলায় আমি তদন্ত কর্মকর্তা নই। আর এ বিষয়ের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য আরিফুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

বগুড়া আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দিদারুল ইসলাম ও সাইদুর রহমানের জমিসংক্রান্ত মামলার বিষয়টি আমার কাছে আছে। এ নিয়ে কাজ চলমান। ভূমি অধিদপ্তর থেকে এই বিষয়ে একটি চিঠিও এসেছে। তবে অন্য কোনো মামলার বিষয়ে এখন আমি অবগত নই।’