Thank you for trying Sticky AMP!!

নদ ভরাট করে সড়ক বিপণিবিতান নির্মাণ

ফরিদপুরের চ​রভদ্রাসন উপজেলা সদরে বাজারের পাশে রাস্তা ও বিপণিবিতান নির্মাণের জন্য নদের জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদরে ভুবনেশ্বর নদের বিশাল জায়গা দখল করে সড়ক ও বিপণিবিতান নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কাজের তদারকি করছেন। অবশ্য জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে নদের দৈর্ঘ্যে প্রায় ৭০০ ফুট ও প্রস্থে ৫০ ফুট জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। এ জায়গাটি বর্তমানে লোহারটেক কোল নামে পরিচিত। সেখানে ৪০-৫০টি দোকান নির্মাণ করা হবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে দোকানের পজেশন বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের টাকা দিয়ে এ কাজ করা হচ্ছে।
উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নদের পাড়সংলগ্ন ১৬৪ নম্বর চরভদ্রাসন মৌজার ১০০৯৯, ১০১০৪, ১০১০৫, ১০১০৯, ১০১১০, ১০৩৯১, ১০৪১২ হাল দাগে মোট জমি ৫৫ শতাংশ। ওই জমির দলিল ও রেকর্ডমূলে মালিক ছিলেন এলাকার কয়েকজন। পরে ওই জমি নদে বিলীন হয়। এরপর চর জেগে উঠলে ১৯৭৩ সালে তা ১ নম্বর খাস খতিয়ানে চলে যায়। এ জমির মালিকানা নিয়ে সরকারের সঙ্গে এলাকার পাঁচ ব্যক্তির পাঁচটি মামলা রয়েছে।
৭ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলা সদরের বাজারসংলগ্ন নদের ওই অংশ ভরাট করা হচ্ছে। পূর্বে চরভদ্রাসন জামে মসজিদসংলগ্ন ধানহাটা থেকে উত্তরে আলী খানের টিনের দোকানের পাশ দিয়ে নদ ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কটি হাসপাতাল সড়কের সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের জরিপকারক (সার্ভেয়ার) ফারুক আলম বলেন, বাজারের যানজট নিরসনে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় নদের অংশবিশেষ ভরাট করে এ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য ইউএনওকে আহ্বায়ক করে ‘চরভদ্রাসন বাজার বিকল্প সড়ক বাস্তবায়ন কমিটি’ও গঠন করা হয়। তবে এ কমিটি নামসর্বস্ব। কাগজে-কলমে এ কমিটির কোনো অস্তিত্ব নেই।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পারভেজ চৌধুরী বলেন, এটি সরকারি কোনো কাজ নয়। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বাজারের যানজট কমানোর। এ নিয়ে উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছে, বাজার বণিক সমিতিও প্রস্তাব দিয়েছে। এ কারণে জনস্বার্থ বিবেচনা করে রাস্তা নির্মাণ ও দোকান বরাদ্দের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পারভেজ চৌধুরী আরও বলেন, ‘ওই জায়গা নিয়ে পাঁচটি মামলা রয়েছে। যাঁরা মামলাগুলো করেছেন আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে সেগুলো প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করছি।’
চরভদ্রাসন বাজার বণিক সমিতির সভাপতি শহিদ মোল্লা বলেন, এভাবে কাজ করার জন্য বণিক সমিতি কখনো কোনো প্রস্তাব দেয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফরিদপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে নদী, খাল বা কোনো জলাধার ভরাট করার পক্ষে কোনো আইন নেই। তবে জনস্বার্থে ও এলাকার উন্নয়নের জন্য ভরাট করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। পাউবো ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ফরিদপুর পাউবোর শাখা কর্মকর্তা এ কে এম জহিরুল হক বলেন, যে জায়গায় নদ ভরাট করে সড়ক ও দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে, সে জায়গার মালিক জেলা প্রশাসন। তবে নদী-নালা, খাল ভরাট করার কোনো সুযোগ নেই। জেলা প্রশাসক ও জেলা নদী রক্ষা কমিশনের সভাপতি সরদার সরাফত আলী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি জেনে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’