Thank you for trying Sticky AMP!!

নিহত মাদক ব্যবসায়ীর ব্যাংকে ১১১ কোটি টাকা

কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাবে শতকোটি টাকার হদিস মিলেছে। এক বছরের মধ্যে ওই ব্যবসায়ীর ১২টি ব্যাংক হিসাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢুকেছে ১১১ কোটি টাকা।

জাহিদুল ইসলাম ওরফে আলো নামের চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ ওই ইয়াবা ব্যবসায়ী ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট র‍্যাব ও বিজিবির সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মৃত্যুর পরে ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) বিষয়টি তদন্ত করতে বলে। পরে দুদক থেকে বিষয়টি পাঠানো হয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে। এখন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিষয়টি তদন্ত করছে।

চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দীন বাজারে শাহ আমানত টাওয়ারে খাজা টেলিকম নামের ছোট্ট একটি মোবাইল যন্ত্রাংশের দোকান ছিল জাহিদুল ইসলামের। ১২ বাই ১৩ ফুট আয়তনের ওই দোকানের নামেই বিভিন্ন ব্যাংকে তাঁর ১২টি হিসাব খোলা হয়েছে। ওই হিসাবগুলোতেই ইয়াবা বিক্রির টাকা লেনদেন হতো। ঢাকার বাইরেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছোট শহর থেকেও দুই-পাঁচ লাখ থেকে শুরু করে পঞ্চাশ লাখ টাকা পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে জাহিদুলের ব্যাংক হিসাবে। বগুড়া, গাইবান্ধা, জয়পুরহাটের মতো উত্তরাঞ্চলের শহর থেকেও টাকা পাঠানো হয়েছে। জাহিদুলের কাছ থেকে ইয়াবা কিনতেই ওই সব টাকা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাঠানো হয়েছিল বলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা।

দীর্ঘদিন ধরে জাহিদুলের ছোট্ট মোবাইল যন্ত্রাংশের দোকানকে কেন্দ্র করে শত কোটি টাকার লেনদেন হলেও কেউ সন্দেহ করেনি। তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করেনি কোনো সংস্থাই। মৃত্যুর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে সোয়া দুই লাখ ইয়াবা এবং পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হন জাহিদুল। এরপর আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। শেষে আগস্ট মাসে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হন।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তদন্ত অনুযায়ী, ২০১৪-এর মাঝামাঝি থেকে ২০১৫ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এক বছরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁর ব্যাংক হিসাবে এসেছে ১১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকে তাঁর দুটি হিসাবে কেবলই টাকা ঢুকছে, কোনো টাকা উত্তোলন করা হয়নি। কেবল ঢাকা ব্যাংকের হালিশহর শাখায় খোলা দুটি হিসাব থেকে টাকা অন্য হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তদন্তের দায়িত্বে থাকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জাহিদুলের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

যাঁরা জাহিদুলের ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের নাম ও মুঠোফোন নম্বর সংরক্ষিত রয়েছে ব্যাংকে। তবে তাতে তদন্তে কোনো লাভ হয়নি। কারণ, ২০১৪-১৫ সালের ফোন নম্বরগুলো বন্ধ, নামগুলোও ভুয়া। কারোরই পূর্ণাঙ্গ পরিচয় নেই। এ ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কারিগরি সীমাবদ্ধতাও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুঠোফোন নম্বর ধরে জাহিদুলের হিসাবে টাকা প্রেরণকারীদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করতে সরকারের অন্য সংস্থাগুলোর সাহায্য চেয়েও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।