Thank you for trying Sticky AMP!!

পদ্মার পাড় দখলের হিড়িক

পদ্মার পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গতকাল বড় কুঠি বিনোদন কেন্দ্র এলাকায়। প্রথম আলো

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পাড় দখল করে গড়ে উঠছে অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের তৈরি করা বিনোদনকেন্দ্রের পাশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ার হিড়িক পড়ে গেছে। সব মিলিয়ে শহরের বিপরীতে পদ্মার পাড়ে এ রকম শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবারিক স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নদী দখলের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। অথচ বিআইডব্লিউটিআইএর নিয়ম অনুযায়ী নদীতীর থেকে ১৫০ মিটারের মধ্যে কেউ কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র এই এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রথম মেয়াদে মেয়র থাকার সময় নগরের বড়কুঠি বালুঘাট (পুরাতন জাহাজঘাট) এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মা নদীর ধারের পরিত্যক্ত জায়গায় দৃষ্টিনন্দন বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলেন। প্রতিদিন বিকেলে সেখানে এখন মানুষের ঢল নামে।

এই বিনোদন কেন্দ্রের নাম দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাজশাহীতে অবস্থানকারী নরওয়ের সাংবাদিক অডভার মুনসগাডের নামে ‘অডভার মুনসগাড পার্ক।’ এই পার্কের পূর্ব পাশে একটি ফুডকোর্ট এবং পশ্চিম দিকে ‘এম্ফি থিয়েটার’ করা হয়েছে। ফুডকোর্টের পাশে বেসরকারি উদ্যোগে আরও ছয়টি ফুডকোর্ট গড়ে উঠেছে। নদীর পাশে যাঁদের জমি রয়েছে, তাঁরা নিজেদের জায়গায় একটি দোকান তৈরি করেছেন। পরে তাঁরা নদীর পাড় বেঁধে তাঁদের প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারিত করেছেন। সেখানে দর্শনার্থীদের বসার জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই দোকানগুলো হচ্ছে রিভার ভিউ ফুড কর্নার, সিফাত ফুডস, রয়্যাল সি স্কয়ার, ফ্রেন্ডস ফাস্ট ফুড ও এন ফুড কর্নার। সন্ধ্যার পর এগুলোয় আলো–ঝলমলে পরিবেশ তৈরি হয়। তরুণ-তরুণীরা ভিড় করেন সেখানে।

গতকাল রোববার সরেজমিন এন ফুড কর্নারের কর্মচারী মাসুদ রানার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, পেছনে দোকানমালিকের বাড়ি। যাঁর যাঁর বাড়ির সামনের সরকারি জায়গার ওপর তাঁরই অধিকার থাকে। সেই হিসাবে মালিক জায়গাটি বেঁধে বসার উপযোগী করেছেন। কিন্তু মাঝখানে সিটি করপোরেশনের রাস্তা ঠিকই আছে।

কথা হয় ফ্রেন্ডস ফাস্ট ফুডের স্বত্বাধিকারী আবদুস সালামের সঙ্গে। তাঁর দাবি, এই জায়গায় তাঁদের ১০ বছরের পরিশ্রম রয়েছে। নিজে গায়ে খেটেছেন। শ্রমিক নিয়ে কাজ করেছেন। তারপর জায়গাটি বসার মতো হয়েছে। এখন নদীর ঢেউ এসে প্রথমে তাঁদের বাঁধা জায়গায় লাগবে। তার নিচে আছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধানো স্লোপিং। তাতে পানি আঘাত করতে পারছে না। তাঁরাই জায়গাটি সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। সন্ধ্যায় একটা মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়। তাতে ৮ থেকে ১০টা ছেলের কর্মসংস্থান হয়েছে। কোথাও ময়লা–আর্বজনা নেই। এখানে কেউ কোনো অসামাজিক কাজ করতে পারে না।

>

নদীর পাশে যাঁর জমি, তিনিই দোকান করেছেন
নদীর পাড় বেঁধে প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারিত করেছেন তাঁরা

বিনোদনকেন্দ্রটির পশ্চিম দিকে যেখানে এম্ফি থিয়েটার রয়েছে। তার বিপরীতে এ রকম আরও অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সবাই নদীর ভেতরে বালুর বস্তা দিয়ে ঘিরে চত্বর তৈরি করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিলন স্টোর, ফাতেমাতুজ্জোহরা চটপটি ও ফুচকাঘর, সুইটি চটপটি, জুনায়েত চটপটি, ফুচকা হাউস, মা-মণি চটপটি, নাজিম উদ্দিন চটপটি অ্যান্ড ফুচকা, চটপটি ঘর, সিজার চটপটি ঘর, বিসমিল্লাহ মিনি চায়নিজসহ বেনামি আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। একটি প্রতিষ্ঠানের কোনো নাম নেই। কিন্তু বাইরে সাজসজ্জা বেশ মনোরম। মালিকের খোঁজ করতেই পেছনের একটি ঢোপঘর থেকে একজন বৃদ্ধ হাঁক দিয়ে বললেন, ‘কী হয়েছে।’ তাঁর দোকানের কাছে যেতেই তিনি বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান তিনি ভেঙে নেবেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বললেন, ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মাটি কেটে তিনি জায়গা বেঁধেছেন। তাঁর ছেলেসহ আরও কয়েকজন দোকানটি চালান। তাঁর ভাষ্য, সবাই করেছেন, তাই তিনিও করেছেন।

একইভাবে নগরের মুন্নুজান স্কুলের বিপরীতে রবীন্দ্র-নজরুল মঞ্চের পাশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, জাহাজঘাট, পঞ্চবটি, খোজাপুর, এলাকায় বাড়ির মালিকেরা তাঁদের বাড়ির পাশে নদীর পাড়ে পাকা স্থাপনা তৈরি করেছেন।

বিজিবি নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় নদীর জায়গা ইজারা নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেছে। রাজশাহী কারা কর্তৃপক্ষও কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রতিবাদে রাজশাহীতে আন্দোলন হচ্ছে।

রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সাহিনুর আলম বলেন, নদীর মালিক তাঁরা নন। মালিক হচ্ছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তাদের নিয়ম অনুযায়ী নদীর ‘ফোর শোর লাইন’ থেকে ১৫০ মিটার পর্যন্ত নদীর এলাকা থাকে। তবে রাজশাহীতে শুধু টি-বাঁধের জায়গাটি পাউবোর অধিগ্রহণ করা। এর আশপাশে যাঁরা দখল করেছেন, তাঁদের তাঁরা ঈদের পরে উচ্ছেদ করবেন।

রাজশাহীতে অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যালয় নেই। এই কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের (ঢাকা) দপ্তরের সমন্বয়কারী সেলিম শেখ ফোনে বলেন, দেশের যে ৩২টি নদীবন্দর রয়েছে, এই বন্দর এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাঁদের। সব নদী তাঁদের নয়। অন্যগুলো জেলা প্রশাসনের।