Thank you for trying Sticky AMP!!

পরিকল্পিত সাইবার অপরাধ তুলনামূলক কম

মামলা বেশি হয়েছে ফেসবুক হ্যাকিংয়ের অভিযোগে। আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনায়ও মামলা হয়েছে।

বাংলাদেশে পরিকল্পিত সাইবার অপরাধের মামলা এখনো অনেক কম। গত সাত বছরে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য আসা মামলার মাত্র ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ হ্যাকিং, কম্পিউটারের সোর্স কোড পরিবর্তনের মতো গুরুতর অভিযোগে করা।

এর মধ্যে হ্যাকিংয়ের মামলাগুলোর বড় অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক হ্যাকিংয়ের অভিযোগে করা হয়। এ ছাড়া বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনায়ও মামলা হয়েছে। এর বাইরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের অভিযোগের মামলাও এসেছে ট্রাইব্যুনালে।

ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের দৈনন্দিন কার্যতালিকাসহ মামলার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য মামলা এসেছে ২ হাজার ৬৬৯টি। এর মধ্যে হ্যাকিং, কম্পিউটার সিস্টেম নষ্ট, কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন, সংরক্ষিত সিস্টেমে প্রবেশসংক্রান্ত মামলার সংখ্যা মাত্র ১১৩। এটা মোট মামলার ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।

সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাইবার অপরাধের মামলা বেশি হচ্ছে মূলত অনলাইনে মানহানি, মিথ্যা তথ্য, অশ্লীল ছবি ও তথ্য প্রকাশের অভিযোগে। সে তুলনায় হ্যাকিংসহ অন্য গুরুতর অপরাধের মামলা কম, সাজাও নগণ্য।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করেন এমন পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ফেসবুক, ইমো, লাইকি, টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওয়েবসাইট ও অ্যাপস ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাকড বেশি হচ্ছে। এসব ঘটনায় করা মামলার আসামিরা বয়সে তরুণ। তাঁদের অনেকেই ইউটিউবসহ নানা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে হ্যাকিংয়ের কৌশল শিখেছেন বলে অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়।

২৫৯টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার অভিযোগে সাঈম মিয়া (২৩) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ৫ মে সাঈমের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাঈম মিয়া একটি অ্যাপের সহায়তায় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নানাভাবে প্রতারণা করে আসছিলেন। মামলাটি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম রসুল প্রথম আলোকে বলেন, মূলত অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ চক্র ফেসবুক, ইমো, বিকাশ, নগদ গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করছে। দিন দিন এ প্রবণতা বাড়ছে।

তহিদুল ইসলাম নামে রাজধানীর একজন বিকাশ এজেন্ট জানান, নিজের বিকাশ এজেন্ট নম্বর ব্যবহার করে তিনি প্রতিদিন অনেক টাকা লেনদেন করতেন। হ্যাকাররা ভুয়া পরিচয় দিয়ে তাঁর কাছ থেকে কিছু গোপন তথ্য জেনে নেয়। এরপর তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৯৭ টাকা হাতিয়ে নেয়। তহিদুল গত বছর অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। তদন্ত করে গত ৭ জুন সজীব মাতুব্বর (২০) ও আশরাফুল ইসলাম (৩৫) নামের দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রে বলা হয়, এ দুই আসামি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে অবৈধভাবে মোবাইল সিম নিবন্ধন করেন। এরপর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা আত্মসাৎ করেন।

পিবিআইয়ের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, হ্যাকিংয়ের মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, কম বয়সী ছেলেরা ফেসবুক, ইমো, লাইকি ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। আর একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ে জড়িত। আবার এটিএম বুথ হ্যাকিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে। তিনি বলেন, এই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মূল কাজ হচ্ছে ব্ল্যাকমেল করা এবং অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীরা অজ্ঞতা ও অসাবধানতার কারণে তুলনামূলক দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছেন হ্যাকার ও প্রতারকেরা।

গত সাত বছরে (২০১৩ থেকে ২০২০) হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধে করা একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের খসড়া ফাঁসের জন্য কম্পিউটার সিস্টেম বিনষ্ট করার মামলায় ছয়জনের সাজা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মো. তারেক প্রথম আলোকে বলেন, কম্পিউটার বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয় নিয়ে যাঁরা লেখাপড়া করছেন, তাঁদের মধ্যে সাইবার অপরাধে জড়ানোর হার নগণ্য। যাঁরা ফেসবুকসহ নানা অ্যাপস ব্যবহার করছেন, তাঁদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান খুব কম। অপরাধপ্রবণ তরুণদের কেউ কেউ এর সুযোগ নিচ্ছেন। এটা মেকাবিলার জন্য সরকারি, বেসরকারিভাবে সাধারণের মধ্যে প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্ক সচেতনতা বাড়াতে হবে।