Thank you for trying Sticky AMP!!

দণ্ডিত সিদ্দিকুরকে হাজতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ

প্রমাণ হলো তিনি স্নাতকোত্তর পাস নন

তাঁর নাম সিদ্দিকুর রহমান। তিনি কেবল এসএসসি পাস। অথচ স্নাতকোত্তর পাসের সার্টিফিকেট জমা দিয়ে ২০০৯ সালে বেসরকারি এনসিসি ব্যাংকে ডেটা প্রসেসর পদে নিয়োগ পান। পরে পদোন্নতি পেয়ে হন অফিসার। ব্যাংকে চাকরি নেওয়ার ছয় বছরের মাথায় ফরিদপুরের নিজ এলাকায় ছয়তলা ভবন গড়ে তোলেন। জমি কেনেন সাত কাঠা। তাঁর চলনে–বলনে সন্দেহ হয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, সিদ্দিকুর রহমান ব্যাংকে চাকরি নেওয়ার পর জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের ৮ কোটি ৯৮ লাখ ৬৬ হাজার ৫৫৫ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এনসিসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালে মামলা করলে দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে সিদ্দিকুর রহমান আসলে স্নাতকোত্তর পাস নন, তিনি মাত্র এসএসসি পাস। সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে আজ সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম রায় দেন। নকল সার্টিফিকেট তৈরির দায়ে সিদ্দিকুরকে আট বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিদ্দিকুর এসএসসি পাস, অথচ তিনি স্নাতকোত্তর পাসের সার্টিফিকেট জমা দিয়ে চাকরি নেন। এরপর দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ব্যাংকের প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে যান। দুদক মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তাঁর সার্টিফিকেট নিয়ে সন্দেহ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই দুদকের একজন কর্মকর্তার তদন্তে সিদ্দিকুরের জালিয়াতি ধরা পড়ে।

এরপর সিদ্দিকুরের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সার্টিফিকেট যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। পরে সিদ্দিকুর যে স্কুল থেকে পাস করেছেন বলে দাবি করেন, সেই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এসএসসি ছাড়া অন্য সব সার্টিফিকেট সিদ্দিকুর নিজেই তৈরি করেছেন।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, সিদ্দিকুর ১৯৯৭ সালে ফরিদপুরের ডোমরাকান্দি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। তবে এনসিসি ব্যাংকে চাকরি নেওয়ার সময় সিদ্দিকুর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জমা দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি দাবি করেন, ১৯৯৯ সালে সিদ্দিকুর ফরিদপুরের সরকারি ইয়াছিন কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে প্রথম শ্রেণি পান। আর ২০০৩ সালে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক, পরের বছর ২০০৪ সালে তিনি একই বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন।

তদন্তের সময় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দুদক লিখিতভাবে জানতে চাইলে জানানো হয়, সিদ্দিকুর নামের কেউ এসব প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেননি। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, সিদ্দিকুরের সার্টিফিকেট ভুয়া। ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মোশারফ আলী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বিষয়টি জানান।

চলছে দুই মামলা
দুদকের সরকারি কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, সিদ্দিকুরের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে আরও দুটি মামলা চলমান। একটি ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ এবং অন্যটি অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা। সিদ্দিকুরের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৯২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৭ সালের ২ আগস্ট মামলা করে দুদক। এই মামলায় তাঁর স্ত্রী শিল্পী আক্তারকেও আসামি করা হয়েছে।

জবাব চাইলে ব্যাংকে আসা বন্ধ করে দেন সিদ্দিকুর
মামলার এজাহারের তথ্য বলছে, সিদ্দিকুর এনসিসি ব্যাংকের রেমিট্যান্স শাখায় কর্মরত থাকার সময় হিসাবে গরমিল পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে জবাব চাইলে তিনি ব্যাংকে আসা বন্ধ করে দেন। তাঁর স্ত্রী শিল্পী আক্তারের ব্যাংক হিসাবে বিপুল অর্থের লেনদেন পাওয়া যায়। জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। অভিযোগপত্রের তথ্য বলছে, সিদ্দিকুরের মোট সম্পদের পরিমাণ ১২ কোটি ৪ লাখ ৪০ হাজার ১৬৪ টাকা। তবে তিনি ৩ কোটি ২১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৮০ টাকার সম্পদ বিবরণী জমা দেন। সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন ৮ কোটি ৮২ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৪ টাকা।

দুদকের সরকারি কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, সিদ্দিকুর এসএসসি পাস হয়েও দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। বাকি দুটি মামলাতেও দুদকের পক্ষ থেকে দ্রুত সাক্ষী আদালতে হাজির করা হবে।