Thank you for trying Sticky AMP!!

ফেনসিডিলের পর ইয়াবার থাবা

জব্দ ইয়াবা বড়ি। ফাইল ছবি

কয়েক বছর আগে ঠাকুরগাঁওয়ে মাদক বলতে ছিল গাঁজা ও ফেনসিডিল। দেশের অন্যান্য জায়গার মতো ঠাকুরগাঁও জেলাতেও সে জায়গা নিয়েছে ইয়াবা। দাম কম, সহজলভ্য, আকারে ছোট, বহন সুবিধাজনক হওয়ায় মাদকসেবীরাও এখন ইয়াবায় ঝুঁকেছেন। মাদক বিক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী বাড়িতেও পৌঁছে দিচ্ছেন ইয়াবা।

জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পরিসংখ্যান বলছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় গত কয়েক বছর ধরে উদ্ধার হওয়া মাদকের শীর্ষে আছে ইয়াবা। জেলার বাসিন্দারা বলছেন, ঠাকুরগাঁওয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন মাদক। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় আনাচকানাচে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক।

তবে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো বলছে, অন্যান্য সময়ের তুলনায় বর্তমানে মাদক পরিস্থিতি ভালো। গত বছর পুলিশের মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে জেলার পাঁচজন মাদক ব্যবসায়ী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়ার পর অন্য ব্যবসায়ীরা চাপে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, মাদকের বিরুদ্ধে তাঁরাও ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান নিয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলায় পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আছেন ২১০ জন। পুলিশের হিসাবে, ২০১৭ সালে প্রায় ১৪ হাজার ইয়াবা বড়ি, ৬৭ কেজি গাঁজা এবং ৯ হাজার ৭৭৭ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। ২০১৮ সালে ইয়াবা উদ্ধার হয় প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার। গাঁজা ৬৬ কেজি। ফেনসিডিল ৫ হাজার বোতল।

মাদকের মামলায় ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে থাকা এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কারাগারের সাক্ষাৎকার কক্ষে সম্প্রতি কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, একসময় ফেনসিডিলের রমরমা বাণিজ্য ছিল। এখন চলছে ইয়াবার। ফেনসিডিলসেবীদের কাছে ইয়াবার কদর বেড়ে যাওয়ায় বিক্রেতারাও ব্যবসার ধরন বদলেছেন।

৫ মে শহরের তাঁতিপাড়া এলাকায় বড় মাঠের পাশের একটি মার্কেটের পেছনের অংশে গিয়ে দেখা যায়, ছোট করে ইট দিয়ে দেয়ালের মতো করে ঘেরা। স্থানীয় দোকানদারেরা শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করেন। পাশাপাশি দুজন দাঁড়ানোর মতো জায়গা। সেখানে ফেনসিডিলের খালি সাতটি খালি বোতল পরিত্যক্ত পড়ে আছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে একজন ইয়াবা সেবনকারী বলেন, ‘আগে ফেনসিডিল খাইতাম। ফেনসিডিলের দাম অনেক। আর পুলিশ অনেক ঝামেলা করে। তার চেয়ে ইয়াবা পাওয়া সহজ। ফোনে যোগাযোগ করে জায়গা বললেই ইয়াবা পৌঁছে যায়। ইয়াবার দামও কম।’

পুলিশ সূত্র বলছে, ঠাকুরগাঁও শহরের মুন্সিপাড়া, রেলস্টেশন, ডিসিবস্তি, গড়েয়ার মোড়, শিবগঞ্জ, কলেজপাড়া, পল্লী বিদ্যুৎ, সালন্দর সিংপাড়া, পুরাতন বাস টার্মিনাল, রুহিয়া এলাকায় মাদক কেনাবেচা হয়। জেলার বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল, হরিপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে মাদকদ্রব্য আসে।

জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শহরের রেলস্টেশন এলাকায় মাদকের প্রকোপ বেশি। তাই সেখানে নাগরিকদের সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে। মাদকবিরোধী সমাবেশ, উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকদের অব্যাহত চাপে রাখা হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও জেলার সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত আছে ৯৮ কিলোমিটার। বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) রয়েছে ২২টি। এর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে ৫০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি)। বিজিবির হিসেবে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে জব্দ করা হয় ৪ হাজার ২৮১ বোতল ফেনসিডিল। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে জব্দ করা হয়েছে ৩৫৩ বোতল ফেনসিডিল।

৫০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এন এম সামীউন্নবী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে বিজিবির জিরো টলারেন্সের কারণে ফেনসিডিলের পাচার অনেকটা কমে এসেছে। ৯৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা পাহারা দেওয়ার ক্ষেত্রে জনবলের কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে।

ঠাকুরগাঁও জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম একেবারেই সীমিত। এই কার্যালয়ে লোকবল থাকার কথা ১০ জন, আছেন ৫ জন। কার্যালয়ের নিজস্ব কোনো যানবাহন নেই। ফলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতেও সমস্যায় পরতে হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও শহরে মাদকের প্রকোপ থাকলেও মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় নেই কোনো সরকারি নিরাময়কেন্দ্র।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, যে পরিমাণ মাদক উদ্ধার হচ্ছে, তা একেবারেই নগণ্য। মাদক সমস্যা যেহেতু কমছে না, তার মানে সরকারি সংস্থাগুলোর তৎপরতা যথেষ্ট না। মাদক নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে নির্লোভভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।