Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব জানাতে হোলি আর্টিজানে হামলা

বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব জানাতে হোলি আর্টিজানে হামলা পুলিশের তদন্তে এসেছে, এই হামলায় জড়িত গোষ্ঠীর নাম নব্য জেএমবি; যারা ঘটনার পর নিজেদের আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস বলে দাবি করে।

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মামলায় সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। খালাস পেয়েছেন একজন। ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবর রহমান আজ বুধবার এই রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া সাত জঙ্গি হলেন আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে র‍্যাশ, রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ। খালাস পেয়েছেন আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইয়ের বাংলাদেশ অস্থিত্ব জানান দেওয়ার জন্য জঙ্গিরা গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলা চালায়। এই হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন তামিম চৌধুরী। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জননিরাপত্তা বিপন্ন করা।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারী কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু সাংবাদিকদের বলেন, আপাতত এই রায়ে তাঁরা সন্তুষ্ট। যে আসামি খালাস পেয়েছেন, এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই রায়ে তাঁর মক্কেলরা সন্তুষ্ট নন। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।

দুপুর ১২টার দিকে বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা শুরু করেন আদালত। রায় ঘোষণার পর আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা চিৎকার শুরু করেন। জঙ্গি হামলার এই ঘটনাকে আদালত বলেছেন, জঙ্গিরা সেদিন নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। মৃতদেহগুলো ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সেদিন হলি আটিজন এর বেকারীকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে জঙ্গিরা। আসামিরা অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারে না।

হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই ঢাকার আদালত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জঙ্গি হামলা মামলার আসামিকে সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে ঢাকার আদালতে আনা হয়। সাড়ে ১১টার পর তাদের আদালতের এজলাসে তোলা হয়। আদালতে কয়েকজন বিদেশি নাগরিক উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। গত এক বছরে রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় ১১৩ জন সাক্ষী হাজির করেছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নিহত পুলিশ সদস্যদের স্বজন, হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে আহত পুলিশ, হোলি আর্টিজান বেকারির মালিক ও কর্মী, জিম্মি হয়ে পড়া অতিথি এবং যেসব বাড়িতে আস্তানা গেড়ে নৃশংস এই হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, সেসব বাড়ির মালিকেরা।

২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে ভয়াবহ ওই হামলার ঘটনা স্তম্ভিত করেছিল পুরো বাংলাদেশকে। একই সঙ্গে স্পষ্ট হয়েছিল জঙ্গিবাদের বিস্তারের এক বিপজ্জনক মাত্রা।

জঙ্গিরা হত্যা করেছিলেন ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে; যাঁদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয় ও ৩ জন বাংলাদেশি। হামলার আড়াই বছরের মাথায় গত বছরের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে হোলি আর্টিজানে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার বিচার।

পুলিশের তদন্তে এসেছে, এই হামলায় জড়িত গোষ্ঠীর নাম নব্য জেএমবি; যারা ঘটনার পর নিজেদের আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট) বলে দাবি করেছিল।

ওই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একের পর এক অভিযান চালিয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়, ভেঙে দিয়েছে জঙ্গিদের অনেক আস্তানা। এসব অভিযানে নিহত হয়েছেন হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীসহ জড়িত গুরুত্বপূর্ণ আট জঙ্গি। আক্রমণকারী পাঁচজন নিহত হন ঘটনার পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে।