Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলোতে থেকেও বাড়িভাড়া ভাতা নিয়েছেন উপাচার্য

আপত্তি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ফেরত দিতে হবে পুরো বাড়িভাড়া ভাতা।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. দিদার-উল আলম তাঁর জন্য বরাদ্দ করা বাংলোতে থেকেও মাসে ৬০ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলছে, এটি আর্থিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী। বাড়িভাড়া বাবদ এ পর্যন্ত নেওয়া পুরো অর্থ উপাচার্যকে ফেরত দিতে হবে।

শুধু বাড়িভাড়া ভাতা নয়, ইউজিসির বাজেট পরিদর্শন দল ২০১২ সালে কেনা পাজেরো মডেলের জিপগাড়ির ব্যবহার নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে। গাড়িটি রাখা হয় ঢাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনে। অভিযোগ রয়েছে, গাড়িটি ঢাকায় উপাচার্যের পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন। ইউজিসি গাড়িটি ঢাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে নির্দেশনা দিয়েছে।

ইউজিসির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ১৮ জুলাই এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, কমিশনের বাজেট পরীক্ষক দল গত বছরের নভেম্বরে ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেট পরীক্ষা করে এসব আর্থিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড চিহ্নিত করেছিল। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে গত ২০ জুনের মধ্যে ইউজিসিকে জানাতে নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু এখনো কোনো কিছু জানানো হয়নি। চিঠিতে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে ইউজিসিকে জানাতে আবারও অনুরোধ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলো থাকার পরও বাড়িভাড়া ভাতা নেওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি পরিবারের সদস্যদের ব্যবহার করতে দেওয়ার ঘটনা শুধু অনিয়ম নয়, নৈতিকতাবিরোধী কাজও। এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। অবশ্য উপাচার্যের দাবি, আগে থেকেই এই প্রথা চলে আসছে।

* বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গাড়ি ঢাকায় রাখা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে ইউজিসি। * উপাচার্যের দাবি, বাড়িভাড়া ভাতা ও গাড়ি ব্যবহারের এই প্রথা আগে থেকেই চলে আসছে।

নোয়াখালী থেকে ঢাকায় গাড়ি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২ সালে একটি পাজেরো জিপ কেনা হয়। তখন উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক এ কে এম সাইদুল হক। তাঁর আমলেই গাড়িটি ঢাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনে ব্যবহারের জন্য নেওয়া হয়। এরপর থেকে গাড়িটি সেখানেই রয়েছে।

বর্তমান উপাচার্য মো. দিদার-উল আলম দায়িত্ব নেন ২০১৯ সালের জুনে। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি দায়িত্বও নেওয়ার পরও গাড়িটি ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে আনা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, গাড়িটি উপাচার্যের পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করলেও চালককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। আগের উপাচার্যের সময়ও এটি তাঁর আত্মীয়রাই ব্যবহার করতেন।

ইউজিসি বলছে, এটি বিধিবহির্ভূত। গাড়িটি অবশ্যই ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা উচিত।

বাংলোতে থেকেও নিয়েছেন ভাতা

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী থেকে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানে উপাচার্যের বাসভবন হিসেবে ‘এয়ারমার্ক’ নামে একটি বাংলো রয়েছে। বাংলোটি বরাদ্দ রয়েছে উপাচার্যের নামে। তবে তাঁর পরিবারের সদস্যরা থাকেন ঢাকার ভাড়া বাসায়।

বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্যাম্পাসে এসে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অতিথি ভবনে থাকতেন। পরে তিনি গত বছরের মার্চে অতিথি ভবন ছেড়ে বাংলোতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে অবস্থান করেন ডিসেম্বর পর্যন্ত। বাংলোতে থাকলেও তিনি মাসে ৬০ হাজার টাকা করে বাড়ি ভাড়া ভাতা নিতেন। ইউজিসি এটি নিয়ে আপত্তি তোলার পর উপাচার্য আবার চলে যান অতিথি ভবনে। এরপর থেকে তিনি অতিথি ভবন ও বাংলো দুটিতেই থাকছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্যের বাড়িভাড়া ভাতার বিষয়ে গত ১১ জুন এক সভায় আলোচনা হয়েছে। তবে উপাচার্য এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। আর গাড়িটি ঢাকায় সাবেক উপাচার্যের স্ত্রী ব্যবহার করতেন। এখনো ওই গাড়ি ঢাকায়ই রয়েছে।

অধ্যাপক ফারুক হোসেন আরও বলেন, আগের উপাচার্যরা বাড়িভাড়া ভাতা নেওয়ার জন্য বাংলোকে অতিথি ভবন হিসেবেও দেখিয়ে এসেছেন। এখনো সেটি বজায় আছে। বাংলো বা অতিথি ভবনে থাকলে দিনে ভাড়া দিতে হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নিয়েছেন দুই বছর হলো। মাসে ৬০ হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া ভাতা দাঁড়ায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকার মতো।

যা বললেন তাঁরা

উপাচার্য মো. দিদার-উল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় ভাড়া নেওয়া বাসাটি তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলোও তিনি আর ব্যবহার করবেন না। একসঙ্গে দুটো বাড়ির ভাড়া দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনে থাকবেন। গাড়ির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আগের উপাচার্যরা দুটি গাড়ি অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন। ব্যবহারও করতেন। কিন্তু তখন কোনো কথা ওঠেনি। এখন এসব কথা উঠছে। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে লেগেছে।’

ইউজিসি সূত্র জানায়, উপাচার্যের বাংলোটি আধুনিক। সেখানে ১৮টি কক্ষ রয়েছে। অন্তত ১০ একর জমির ওপর বাংলোটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু উপাচার্য ইউজিসির কাছে জানিয়েছেন তিনি সেখানে থাকছেন না। তিনি পাশের অতিথি ভবনে থাকেন।

ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান প্রথম আলোকে বলেন, কোটি টাকা খরচ করে বাংলো তৈরি করা হয়েছে উপাচার্য থাকার জন্য। কিন্তু উপাচার্য বাংলোতে না থাকার বিষয়টি নৈতিকতাবিরোধী কাজ। বাড়িভাড়া ভাতা টাকা ফেরত দিতে হবে।