Thank you for trying Sticky AMP!!

বিজ্ঞাপন দেখে টাকা আয়ের কথা বলে প্রতারণা

তিন মাসে প্রতারণার মাধ্যমে ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ। প্রতারক চক্রের ১১ সদস্যের সন্ধান। গ্রেপ্তার ৩।

অনলাইনে দিনে ২৫টি বিজ্ঞাপন দেখে আয় করা যাবে ৩০০ টাকা। আর ১২টি দেখলে আয় হবে ১৪০ টাকা। তবে টাকা আয়ের জন্য আপনাকে ‘প্যাকেজ’ কিনে সদস্য হতে হবে। ৬ হাজার অথবা ১২ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য আইডি কিনে টাকা আয় করতে পারবেন আপনিও। এ ছাড়া নতুন সদস্য আনতে পারলে পাওয়া যাবে ৫০০ টাকা কমিশন।

‘রিওয়ার্ডরুপি ডটকম’ নামের একটি ওয়েবসাইট খুলে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে টাকা আত্মসাৎ করা একটি প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ডিবি জানায়, সোহেল রানা নামের এক ভুক্তভোগী গত ১৫ ডিসেম্বর রাজধানীর কদমতলী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। পরদিন রাজধানীর দক্ষিণখানের মোল্লাবাড়ি এলাকা থেকে চক্রের প্রধান রুবেল হাসানসহ (২৮) তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তার বাকি দুজন হলেন এজেন্ট মাহিম আহমেদ (মুন্না) (২১) ও রোজিনা আক্তার (২৩)। তাঁদের কাছ থেকে তিনটি মুঠোফোন ও ছয়টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

ভারতীয় কোম্পানির ভুয়া পরিচয়ে গত তিন মাসে ১ হাজার ৬০০ জনের কাছ থেকে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ২ কোটির বেশি টাকা তুলে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে ডিবি। সারা দেশে এই চক্রের রয়েছে ১১ জন এজেন্ট। শুরুতে বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য সদস্যদের বিজ্ঞাপন দেখা বাবদ কিছুদিন টাকা দিলেও পরবর্তী সময়ে আর দেওয়া হতো না। একটি ভারতীয় মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে খোলা ওই ওয়েবসাইটে কোনো অফিসের নাম–ঠিকানা ছিল না। ফলে ভুক্তভোগীরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারতেন না।

শুধু একটি ওয়েবসাইট খুলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন এই চক্রের সদস্যরা।
মহিদুল ইসলাম এডিসি, সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ, ডিবি

মামলার বাদী সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৪ হাজার টাকা দিয়ে আমি “স্ট্যান্ডার্ড আরএস দশ কে” নামের দুটি সদস্য আইডি কিনেছিলাম। সেখানে বিদেশি বিজ্ঞাপন দেখা যেত। কিছুদিন বিজ্ঞাপন দেখেছি। তবে কোনো টাকা পাইনি।’

ডিবি সূত্র জানায়, বিজ্ঞাপন দেখে টাকা আয়ের কথা বলে তিন মাসে ২১৩ কোটি টাকা তুলে নেয় এমএলএম কোম্পানি রিংআইডি। গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের অক্টোবরে কোম্পানিটির পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ঠিক একই কায়দায় ওয়েবসাইট খুলে এমএলএম ব্যবসার নামে এই প্রতারণা শুরু করেন রুবেল হাসান। পরে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে সদস্য সংগ্রহ করেন। এভাবেই তিন মাসে প্রতারণার মাধ্যমে ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। টাকা সংগ্রহ করা হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। ডিবি বলছে, এই টাকা থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন রুবেল হাসান। আর বাকি টাকা এজেন্টরা ভাগ করে নিয়েছেন।

■ এর আগে বিজ্ঞাপন দেখে টাকা আয়ের কথা বলে তিন মাসে ২১৩ কোটি টাকা তুলে নেয় কথিত এমএলএম কোম্পানি রিংআইডি। ■ গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের অক্টোবরে কোম্পানিটির পরিচালক সাইফুল ইসলাম গ্রেপ্তার হন।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শুধু একটি ওয়েবসাইট খুলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন এই চক্রের সদস্যরা। তিনি বলেন, ওয়েবসাইটটিতে রুপি শব্দটি ব্যবহার করে ভারতীয় কোম্পানি বলে প্রচার করলেও এটি তা নয়।

প্রতারক চক্রের আরও ৮ এজেন্ট শনাক্ত

ডিবি জানায়, রুবেল হাসানসহ সারা দেশে চক্রের ১১ জন এজেন্ট রয়েছে। তিনজন গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা পলাতক। তাঁরা হলেন মনির হোসেন, রোজি আক্তার, মোহাম্মদ মিথুন, রুহুল আমিন শেখ, মাহিম ইসলাম, সালেহ মুশা আহমেদ (প্রিয়া), আহাদ হোসাইন (লিমন) ও মারুফ হোসাইন। পুলিশ বলছে, রুবেল হাসান পেশাদার প্রতারক হলেও গ্রেপ্তার বাকি দুজন শিক্ষার্থী।