Thank you for trying Sticky AMP!!

বিপদ বুঝে পালাল 'চাঁদাবাজ' হাতি

জনতার প্রতিরোধ ও সাংবাদিকদের ক্যামেরা তাক করতে দেখে টাকা না নিয়েই পালাল চাঁদাবাজ হাতি। ছবিটি বুধবার সকালে ভৈরব পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকা থেকে তোলা। ছবি: সুমন মোল্লা, নিজস্ব প্রতিবেদক, ভৈরব

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাতি নিয়ে ভৈরব পৌর শহরের ফাতেমা রমজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করলেন মাহুত। দোকানি, পথচারী আর অটোরিকশা চালকদের সামনে শুঁড় উঁচিয়ে টাকা চাইছিল হাতি। একপর্যায়ে গণমাধ্যমের কর্মীসহ সবার প্রতিরোধের মুখে হাতি নিয়ে মাহুত পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

আজ বুধবার সকাল সোয়া ১০টায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের উত্তরপাড়ার ফাতেমা রমজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় লোকজনের সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার দোকানে দোকানে গিয়ে দোকানিদের সামনে শুঁড় উঁচিয়ে টাকা দেওয়ার বার্তা দেয় হাতি। মাঝসড়কে দাঁড়িয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার গতি রোধ করে চালকদেরও একই সংকেত দেয়। হাতির খপ্পর থেকে বাদ পড়েননি পথচারীরাও। নিরুপায় দোকানি, চালক ও পথচারীরা ১০-২০ টাকা করে দিয়ে নিজেদের রক্ষা করছিলেন। ১০ টাকার কম দিলে নিচ্ছিল না হাতি। এই বিষয়ে মাহুতের স্পষ্ট বয়ান, ‘ঈদ সেলামি, আমার হাতি ১০ টাকার নিচে নেয় না’। এই ইস্যুতে বেশ কয়েকজন দোকানি ও চালকের সঙ্গে মাহুতের তর্কও বাধে।

একপর্যায়ে পথচারী ও দোকানিরা প্রতিরোধে নামেন। এগিয়ে আসেন গণমাধ্যমের কর্মীরাও। জনগণের প্রতিরোধ আর গণমাধ্যমের কর্মীদের ক্যামেরা তাক করা দেখে হাতি শুঁড়ে আর টাকা তুলছিল না। মাহুতও স্থান ত্যাগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শেষে মুখে গামছা বেঁধে দ্রুতগতিতে হাতি নিয়ে নিজেকে আড়াল করেন মাহুত।

নাম-পরিচয় প্রকাশ করতেও রাজি হননি মাহুত। শুধু বলছিলেন, কিছুদিন আগে অন্য একটি জেলায় সাংবাদিকদের কারণে তাঁর হাতি বিপদে পড়েছিল। কয়েক দিন থানায় বাস করতে হয়েছে। আর তাঁকে গুনতে হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।

স্থানীয় লোকজন জানান, কিছুদিন পরপর এলাকায় হাতির প্রবেশ ঘটে। হাতির প্রবেশ মানে দোকানি ও অটোচালকদের টাকা খসা। সমস্যা হলো ১০ টাকার নিচে দিলে ক্ষুব্ধ হয় হাতি। উল্টোপাল্টা আচরণ করে। দোকানের জিনিসপত্র ফেলে দিতে চায়। বিশাল দেহের হাতি যখন ক্ষুদ্র দোকানির সামনে দাঁড়িয়ে টাকা দাবি করে, তখন বাক্সে টাকা আছে কি নেই, সে কথা ভাবার সুযোগ নেই দোকানির। এক কথায় হাতির এই উপদ্রব ভয়াবহ। ফলে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে হাতিকে তুষ্ট করতে হয় সাধারণ মানুষের।

চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল পাশের উপজেলা কুলিয়ারচরের আগরপুর বাসস্ট্যান্ডে ১০ টাকা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হাতি মো. বাতেন নামের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার এক চালককে শুঁড়ে তুলে আছাড় দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। এতে চালক গুরুতর আহত হন। বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেশ কিছু দিন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছাড়লেও কর্মে ফিরতে পারেননি তিনি।

পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকার দোকানি ফারুক মোল্লা। এরই মধ্যে তিনি একাধিকবার হাতির চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন। ফারুক বলেন, ‘কোনো কথা নাই। এসেই মুখের সামনে শুঁড় নাড়াচাড়া করে। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত মাফ নাই। এবার এসে ঈদ সেলামি চায়, দেইনি। শেষে পালাইছে।’

সড়কে হাতির ঘন ঘন উপদ্রবে বিরক্ত স্থানীয় সমাজ সচেতন ব্যক্তিরাও। রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নানা ধরনের চাঁদা দিয়ে আমাদের এখন সমাজে টিকে থাকতে হচ্ছে। এই অবস্থায় যুক্ত হলো হাতির চাঁদাবাজি।’ হাতির উপদ্রব থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় কিছু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন রফিকুল ইসলাম।