Thank you for trying Sticky AMP!!

ভাতার টাকায় ভাগ বসান তিনি

টাকা। প্রতীকী ছবি

সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সরকার দেশের প্রতিটি গ্রামে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দিচ্ছে। সরকারের এই উদ্যোগের কারণে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডে অসহায় এই তিন শ্রেণির মানুষের ভাতা নিয়ে নয়–ছয় করার অভিযোগ উঠেছে খোদ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের (মেম্বার) বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের নাম নিতাই চরণ দাশ। তালিকায় নাম তুলতে তিনি অগ্রিম টাকা নেন, আবার ভাতা মঞ্জুর হওয়ার পরও সেখান থেকে ভাগ বসান। এ ছাড়া ভাতা তোলার বই সংশ্লিষ্ট অসহায় তিন শ্রেণির ব্যক্তিদের কাছে থাকার নিয়ম। কিন্তু সে বই ইউপি সদস্য নিতাই নিজের কাছে রাখছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভাতা তোলার পর নিতাই দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কেটে রাখেন। আবার তালিকায় নাম তোলার জন্য অগ্রিম নেন তিন হাজার টাকা। আর এই কাজে একজন গ্রাম পুলিশকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন।

মিরসরাই উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ইছাখালী ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৪ জন। এর মধ্যে চরশরৎ ওয়ার্ডে এই তিন শ্রেণিতে ভাতাভোগীর সংখ্যা ১১০ জন। বিধবা ও বয়স্ক ভাতা পান এমন অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ভাতা পেতে তাঁরা ইউপি সদস্যকে টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রতি ছয় মাসে তিন হাজার টাকা করে ভাতা তোলেন।

১২ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে গেলে চরশরৎ গ্রামে কথা হয় বিধবা বিষকা চক্রবর্তীর (৬২) সঙ্গে। এই বৃদ্ধার অভিযোগ, ভাতা পেতে টাকা লাগবে বলে ইউপি সদস্য নিতাই চরণ দাশ গ্রাম পুলিশ উৎপল দাশের মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেন। বিষকা বলেন, ‘কিছুদিন আগে ভাতার টাকা পেলে আমি গুনে দেখার আগেই সব টাকা নিয়ে নেন ইউপি সদস্য নিতাই। পরে আমাকে দেড় হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি কাউকে না জানাতে বলেন। আমার ভাতার বইও তাঁর কাছে।’

একই গ্রামের কৃষ্ণ গোস্বামী (৬৪) বলেন, ‘সরকারি বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম তুলতে তাঁর কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেয় গ্রাম পুলিশ। এই টাকা নাকি নিতাইকে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে ছয় মাসের ভাতা বাবদ তিন হাজার টাকা পেলে সেখান থেকেও দুই হাজার টাকা রেখে আমাকে মাত্র এক হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন ইউপি সদস্য নিতাই চরণ।’

অঞ্জলী রাণী দাশ (৬২) নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, প্রতিবন্ধী ছেলেকে ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেন নিতাই। সুদের ভিত্তিতে নেওয়া সেই তিন হাজার টাকার সুদ পরিশোধ করে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু এখনো ভাতার ব্যবস্থা করেননি নিতাই।

তালিকায় নাম তোলার কথা বলে কিরণ চন্দ্র দাশের কাছ থেকে ছয় হাজার, আমেনা খাতুন থেকে দুই হাজার, রমণী মোহন দাশ থেকে তিন হাজার, হাজেরা খাতুন থেকে তিন হাজার ও প্রভাতী রাণী দাশ থেকে চার হাজার টাকা ইউপি সদস্য নিতাই নেন বলে তাঁদের অভিযোগ। চার হাজার টাকা চাওয়ায় বয়স্ক ভাতা পাওয়ার আবেদনই করেননি দেলোয়ার হোসেন নামের গ্রামের আরেক বৃদ্ধ।

গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইউপি সদস্য নিতাই চরণ দাশ বলেন, ‘এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি মসজিদে-মন্দিরে টাকা দিই। আমি কারও কাছ থেকে অন্যায়ভাবে কোনো টাকা নিইনি।’ তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাতা বই কেন নিজের কাছে রেখেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ইউপি সদস্য নিতাই চরণ দাশ কোনো সদুত্তর দেননি।

চরশরৎ গ্রামের গ্রাম পুলিশ উৎপল কুমার দাশ  বলেন, ‘ইউপি সদস্য আমাকে বলেছেন বিষকা চক্রবর্তী ও রমণী মোহন থেকে তিন হাজার টাকা করে আনতে। টাকা এনে আমি তাঁর হতে দিয়েছি। এসব কিসের টাকা তা আমি জানি না।’ মিরসরাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে ইউপি সদস্যের টাকা নেওয়ার অভিযোগ কোনো ব্যক্তি আমাদের জানায়নি। এমন যদি হয় তবে তা অনিয়ম।’

সাবরিনা আরও বলেন, দরিদ্র বলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব পর্যন্ত খুলে দেয় সরকার। আর ভাতার বই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে থাকবে। অন্য কারওর সেই বই রাখার সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।