Thank you for trying Sticky AMP!!

ভিডিও চিত্রে ধরা পড়ল কলেজছাত্রকে নির্মমভাবে হত্যার দৃশ্য

নিহত কলেজছাত্র কামরুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার মিরপুরে কামরুজ্জামান ওরফে ইমন (১৮) নামের এক কলেজছাত্রকে মানসিক চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র নির্মমভাবে হত্যার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ২০ নভেম্বর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

মানসিক চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র থেকে স্ট্রোকে কামরুজ্জামানের মৃত্যু হয়েছে জানানোর পর পরিবার ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁর লাশ দাফন করে। তবে গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুকে তাঁকে মারধর ও শরীরে ইনজেকশন প্রয়োগের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে এলাকায় হইচই পড়ে যায়।

কামরুজ্জামানের বাড়ি মিরপুর উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের কাদিরপুর গ্রামে। তিনি রাজশাহী সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

কামরুজ্জামানের পরিবার জানায়, রাজশাহীতে দুই ভাই-বোন মিলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ৪ নভেম্বর হঠাৎ করে কামরুজ্জামান অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। অনর্গল কথা বলতে থাকেন। মানসিক সমস্যা হয়েছে ভেবে পাবনাতে নিয়ে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। সেখানকার চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিয়ে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর বাড়িতে নানাভাবে ঝামেলা করতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে ১৯ নভেম্বর তাঁকে সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। পরের দিন সকালে ফোন করে পরিবারকে জানানো হয়, কামরুজ্জামান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে বাবা এজাজুল আজিম ছেলের লাশ দেখতে পান।

ওই মানসিক চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কামরুজ্জামান রাতে স্ট্রোক করে মারা গেছেন। বাবা তখন ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যান।

গতকাল ওই কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন পরিবারের সদস্যরা। তাতে দেখা যায়, কামরুজ্জামানকে হাত-পা বেঁধে মারধর করা হচ্ছে। একপর্যায়ে তাঁর শরীরে কয়েক দফায় ইনজেকশন পুশ করা হয়।

কামরুজ্জামানের বড় বোন রোকসানা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, কামরুজ্জামানসহ তাঁরা চার ভাই-বোন। একমাত্র ভাইকে নিয়ে তিনি রাজশাহীতে থাকতেন। তবে বিয়ের পর সম্প্রতি তিনি ঢাকাতে চলে যান। রাজশাহীতে থাকার সময় কামরুজ্জামানকে তিনি কখনো ধূমপান করতে দেখেননি। মানসিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় ভাইকে সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুটা যে স্বাভাবিক ছিল না, সেটা সিসি ক্যামেরার ফুটেজেই দেখা যাচ্ছে।

কামরুজ্জামানের মা কামরুন্নাহারের অভিযোগ, ‘ছেলেকে সুস্থ করার জন্য রেখে আসা হয়েছিল। তাঁকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হলো।’

মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন বলেন, কামরুজ্জামানকে বেলা ১১টার দিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। কী কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কামরুজ্জামানকে ১৯ নভেম্বর দুপুর ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত কয়েক দফায় ঘরের মেঝেতে ফেলে মারধর করা হয়। একটি ফুটেজে তাঁর হাত ও পা কাপড় দিয়ে বাঁধা দেখা যায়। একপর্যায়ে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মতিন শরীরে ইনজেকশন দেন। ইনজেকশন দেওয়ার সময় তাঁর হাত-পা বাঁধা ছিল। এ সময় কয়েকজন তাঁর বুক ও গলা চেপে ছিলেন।

জানতে চাইলে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। কামরুজ্জামানের অবস্থা খারাপ দেখে একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়। দুটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ওই ছাত্রকে আঘাত করার কথা তিনি অস্বীকার করেন।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এএসএম মুসা কবির প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকের লিখিত ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনোভাবেই কেউ ঘুমের ইনজেকশন প্রয়োগ করতে পারেন না।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঝিনাইদহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব কুষ্টিয়া) আজিজুল হক আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন,‘কেন্দ্রটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু অসংগতি পাওয়া গেছে। তা ছাড়া কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে চিকিৎসক দেখানো উচিত। তা না হলে কেন্দ্রের মালিক নিজেই যেটা করেছেন, সেটা ঠিক করেননি। এ ব্যাপারে ঢাকায় অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’