Thank you for trying Sticky AMP!!

ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

মাগুরা

মাগুরায় পৌর সহকারী ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভূমি উন্নয়ন করের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেবাপ্রত্যাশীদের দুই শতাধিক ফাইল আটকে রেখে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে জেলা প্রশাসন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা পৌর ভূমি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে নাগরিকেরা দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন। কয়েকজন সেবাপ্রত্যাশী জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুন্নাহার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌসুমী জেরিন ৩ মে পৌর ভূমি অফিস পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনের সময় তাঁরা ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, অন্যান্য আদায় এবং নামজারির মামলাসহ বিভিন্ন রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা করে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পান।

পরে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল মিয়াকে তাৎক্ষণিকভাবে শ্রীপুর উপজেলায় বদলি করা হয়। তাঁকে বদলি করার পর তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর সব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পায় জেলা প্রশাসন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গত ৩০ এপ্রিল পৌর ভূমি অফিস ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করে ২৯ লাখ ৬৪ হাজার ৫৪৬ টাকা। নিয়মানুযায়ী ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি কোষাগারে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৮ টাকা জমা দেওয়া হয়। বাকি ১৩ লাখ ২১ হাজার ৮৯৮ টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। করের বাকি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ছাড়া পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল মিয়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের রশিদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও নানা ধরনের কারচুপির আশ্রয় নিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এ বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৌর ভূমি অফিসে সেবা নিতে যাওয়া নাগরিকদের অভিযোগ পেয়ে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। তদন্ত করে অনিয়ম-দুর্নীতি ও টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল মিয়াকে শ্রীপুরে বদলি করা হয়েছে। এ বিষয়ে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ছাড়া তদন্তে আরও জানা গেছে, পৌরসভার ইসলামপুর পাড়ার মৃত হাবিবুর রহমান এবং তাঁর স্ত্রী উম্মে সালমার ওয়ারিশ আহসান হাবিব, আসলাম হাবিব এবং নুসরাত হাবিবের কাছ থেকে মাগুরা কলেজপাড়ার ৪৬ শতক জমি (খতিয়ান নম্বর ১৭৯২ ও দাগ নম্বর ৪৫৯/৬০) এবং তাঁদের পারনান্দুয়ালী এলাকার জমির ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ রশিদের মাধ্যমে ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আদায় করেন ভূমি কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল মিয়া। কিন্তু তিনি সরকারি কোষাগারে ৭০ হাজার টাকা জমা দেন। এ ছাড়া দুই শতাধিক ফাইল তাঁর টেবিলে পাওয়া যায়। যেগুলো তিনি দীর্ঘদিন আটকে রেখে সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানি করছিলেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে পৌর ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভূমি অফিসে এমন অনিয়ম-দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। অনেক সেবাপ্রত্যাশীও কর আদায়কারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি করতে সহায়তা করেন। নানা কৌশলে নির্ধারিত কর কম দেখিয়ে সেবাপ্রত্যাশীরা লাভবান হন। এ ক্ষেত্রে সেবাপ্রত্যাশীদের অনৈতিক সুযোগ দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেন কর কর্মকর্তারা। কর বেশি আদায় করে কাগজে-কলমে কম দেখানো অনেকটা রেওয়াজ হয়ে গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কর আদায় নিয়ে চাপ থাকে। যে কারণে মাসিক আদায়ের রিপোর্টে বেশি দেখানো হয়। এটা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। পরে বিষয়টি সমন্বয় করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি। আদায় হওয়া সব টাকাই সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছি।’