Thank you for trying Sticky AMP!!

ভৈরবে ছিনতাই বেড়েছে, বাড়ছে আতঙ্ক

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিষয়ের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বাসিন্দা। ট্রেনে চট্টগ্রামে যাবেন বলে রাতে বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় আরোহী হন। কিছু দূর এগোতেই ছিনতাইকারীরা তাঁর সর্বস্ব কেড়ে নেয়। তাতেই শান্ত থাকেনি অপরাধী চক্রটি, শুরুতে এবং শেষে ছুরিকাঘাত করে নুরুজ্জামানের শরীর রক্তাক্ত জখম করে।

জানা গেছে, এক মাস ধরে ভৈরবে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বিশেষ করে উপজেলার ১৫টি জায়গায় অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। মূলত স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা অন্তত সাতটি ছিনতাইকারী চক্র এসব জায়গা নিয়ন্ত্রণ করছে। ছিনতাইকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ কিশোর। প্রত্যেকে ইয়াবায় আসক্ত।

তবে পুলিশ দুই দিন ধরে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে মাঠে অভিযান পরিচালনা করছে। দুই দিনের অভিযানে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে ১৫ জন ছিনতাইকারী। এর মধ্যে দুজন ছিনতাই করে আনা মুঠোফোন ক্রেতা। 

ভৈরব থানার ওসি মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘পুরোনোদের আমরা জানি। তাদের ধরে নানাভাবে জেলে রাখি। কিন্তু সমস্যা হলো এখন যারা ছিনতাই করছে, তাদের বেশির ভাগই পেশায় নতুন ও কিশোর।’ ওসি জানান, সম্প্রতি বেড়ে যাওয়া ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের দুটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের কাজই হলো ছিনতাই প্রতিরোধ ও ছিনতাইকারীদের ধরা। এই দলে নেতৃত্বে আছেন উপপরিদর্শক রাসেল মিয়া, মুখলেছুর রহমান রাসেল, অভিজিৎ চৌধুরী ও আমজাদ শেখ।

ভৈরব ব্রিটিশ আমল থেকে ব্যবসাকেন্দ্র ও নদীবন্দর। গভীর রাত পর্যন্ত প্রধান সড়কগুলো দিয়ে মানুষের যাতায়াত রয়েছে। বিশেষ করে শহরের সড়কগুলোর কয়েকটি জায়গায় সারা বছরই কমবেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কয়েক বছরের ব্যবধানে পুলিশের উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান, মো. পলাশ নামের একজন আইনজীবী ও ভৈরব রেলওয়ে সেতুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক কনস্টেবল ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন। যখন কোনো বড় ঘটনা ঘটে, তখনই প্রশাসন এবং স্থানীয়রা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়। তখন বেশ কিছুদিন সড়কগুলো নিরাপদ থাকে। সময়ের ব্যবধানে সবকিছু আগের মতোই হয়ে যায়। এক মাস ধরে ভৈরবে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন কেউ না কেউ ছিনতাইকারী দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। 

কিছুদিন আগে মো. বিজয় নামের একটি বেকারি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা তাঁর কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। বিজয় বলেন, ভৈরবে ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো বেশ ভয়াবহ। এখানকার ছিনতাইকারীরা পথচারীদের ধরেই প্রথমে ছুরিকাঘাত করে। পরে সব কেড়ে নিয়ে চলে যাওয়ার সময় আবার ছুরিকাঘাত করে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বর্তমানে ছিনতাইয়ের জন্য সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্টেশন রোড, মনামারা সেতু, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর ওপর ও নিচ, পাওয়ার হাউস সড়ক, হাজী আসমত কলেজ সড়ক, এমপি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন স্থান, স্টেডিয়াম সড়ক, জগন্নাথপুর রেলগেট, চণ্ডীবের রেলওয়ে মন্দির, তিন সেতুর পাড়, গাছতলাঘাট, চণ্ডীবের মুর্শিদ-মুজিব স্কুল এলাকা, গোছামারা সেতু ও শিমুলকান্দি সেতু। 

গাছতলাঘাট এলাকার এক ছিনতাইকারী বলেন, চক্রের একজন প্রধান থাকেন। নির্দেশনা থাকে ধরেই বুকে কিংবা হাতে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে হবে। তাতে রক্ত বের হবে। রক্ত দেখলেই আক্রান্ত ব্যক্তি ভয় পেয়ে যাবেন। তখন সবকিছু কেড়ে নিতে সহজ হয়। চলে যাওয়ার সময় ছুরিকাঘাতের কারণ সম্পর্কে এক ছিনতাইকারী বলেন, যেন আক্রান্ত ব্যক্তি কোনোভাবেই তাদের ধরে ফেলার চেষ্টা করতে না পারেন, সেই কারণেই এটা করা হয়।

ভৈরবের জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এবং ছিনতাই প্রতিরোধে ধীরে ধীরে নাগরিক আন্দোলন গড়ে উঠছে। গত রোববার প্রেসক্লাবে এই বিষয়ে সভা হয়েছে। ভৈরব প্রেসক্লাবের সভাপতি জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় স্থানীয় ৪০ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ বুধবার পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা হবে। সভা থেকে সমন্বিত উদ্যোগে মাদক ও ছিনতাই প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।