Thank you for trying Sticky AMP!!

ভৈরবে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারীর লাশ উদ্ধার

মাহাবুবুর রহমান

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মাহাবুবুর রহমান (৩৫) নামে রেলওয়ের এক কর্মচারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পৌর শহরের চন্ডিবের উত্তরপাড়ার পৈতৃক বাড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত মাহাবুব বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের এসএস ফিটার পদে কর্মরত ছিলেন।

মাহাবুবের স্ত্রী রোকসানা আক্তারের দাবি, গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘরে ডাকাত আসে। ডাকাতরা ছুরিকাঘাত করে তাঁর স্বামীকে মেরে ফেলে। এ সময় তিনিও আহত হন। রোকসানা বর্তমানে বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।


নিহতের পরিবারের সদস্য ও পুলিশ জানায়, কর্মসূত্রে মাহাবুব ঢাকায় থাকলেও তিন সন্তান নিয়ে তাঁর স্ত্রী পৈতৃক বাড়িতে থাকেন। মাহাবুবের পরিবারের সদস্যরা থাকতেন নিচতলায় আর তাঁর বড় ভাই হাবিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য থাকেন দুতলায়। সপ্তাহে একবার বাড়িতে আসেন মাহাবুব। গতকাল রাতে তিনি ভৈরবে আসেন। ভোররাত চারটার দিকে মাহাবুবের বড় ছেলে আজিজুর স্বজনদের ঘরে গিয়ে সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে ওঠায়। আজিজুর জানায়, ডাকাতরা তাঁর বাবাকে মেরে ফেলেছে। পরে প্রতিবেশীরা ঘরে গিয়ে দেখেন বিছানায় আজিজুরের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে।

বাবুল মিয়া মাহাবুবের আপন চাচা। আজিজুর প্রথমে বাবুল মিয়াকে ডেকে তোলেন। বাবুল জানায়, ‘আজিজুরের কান্নাজড়িত কণ্ঠ শুনে দরজা খুলি। এরপর শুনতে পাই মাহাবুবকে ডাকাতরা মেরে ফেলেছে। আমরা ঘরে গিয়ে দেখি স্ত্রী রোকসানা আক্তার পাশে বসে কাঁদছেন। আমরা ঘরে যাওয়ার আগেই মাহাবুবের মৃত্যু হয়। সেই কারণে আর হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।’

মাহাবুবের বড় ভাই হাবিবুর রহমান ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সরেজমিন পত্রিকার জ্যেষ্ঠ নিজস্ব প্রতিবেদক। ভাই খুন হওয়ার কথা শুনে ভোরে ভৈরবে আসেন। হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার বাড়িটিতে উঁচু সীমানা প্রাচীর রয়েছে। দরজা জানালা সবই অক্ষত আছে। ডাকাতরা কীভাবে ঘরে ঢুকল, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’

আজিজুর জানায়, গতকাল রাত ১০টার দিকে তার বাবা ঢাকা থেকে আসে। রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। বাবা ও মা এক কক্ষে ছিলেন। তারা তিন ভাই-বোন ছিল অন্য একটি কক্ষে। রাত চারটার দিকে মা তাকে ডেকে তুলে বলে ডাকাতরা তার বাবাকে মেরে ফেলেছে। বাবার রক্তাক্ত শরীর দেখে দৌড়ে বাইরে চলে গিয়ে প্রতিবেশীদের ঘুম থেকে ডেকে তোলে আজিজুর।

মাহাবুবের বুকে ও মাথায় পাঁচটি ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। রোকসানাকে হাতে আঘাতের চিহ্ন আছে। রোকসানাকে প্রথমে নেওয়া হয় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘ডাকাতরা সংখ্যায় চার থেকে পাঁচজন ছিলেন। তখন রাত সাড়ে তিনটা হবে। তাঁরা দরজায় এসে কড়া নাড়েন। দরজা খুলতে বলেন। দরজা না খুললে সবাইকে মেরে ফেলা হবে—এমন হুমকি দেন। ভয়ে দরজা খুলে দিই। এরপর তাঁরা প্রথমে আমার স্বামীকে ছুরিকাঘাত করে মেরে ফেলেন। এরপর আমাকে ছুরিকাঘাত করেন। চলে যাওয়ার সময় তিন ভরি স্বর্ণালংকার ও ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যান।’ ঘটনার সময় তিন সন্তান ঘুমিয়ে ছিল বলে জানান তিনি। একপর্যায়ে রোকসানা বলেন, তাঁর স্বামী একাধিক ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়েছিলেন।

রাতেই ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীন ও পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল আলম খানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বাড়িটিতে অবস্থান নিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। বাহালুল আলম খান বলেন, ‘বোঝা যাচ্ছে, ডাকাতরা ঘরে ঢুকতে প্রতিরোধে পড়েননি। দরজা-জানালা ভাঙার প্রয়োজন হয়নি। সবই ঠিক আছে। সবকিছু মাথায় রেখেই আমরা এগোচ্ছি।’