Thank you for trying Sticky AMP!!

ভয়ে নবজাতককে ট্রাংকে লুকিয়ে রাখেন ছাত্রী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলে সন্তান জন্ম দেওয়া ছাত্রীকে স্ত্রী হিসেবে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। তিনি নিজেকে মৃত নবজাতকের বাবা হিসেবে দাবি করেছেন। এদিকে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ভয় পেয়ে ওই ছাত্রী নবজাতককে ট্রাংকে লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন।

নবজাতকটির পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয়। নবজাতকের মরদেহ গতকাল রোববার দুপুরে ছাত্রীর বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

গত শনিবার বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের একটি কক্ষের তালাবদ্ধ ট্রাংক থেকে একটি নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। পরে নবজাতককে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক নবজাতককে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ১০টার দিকে নবজাতকটির মৃত্যু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক ছাত্র রনি মোল্লা নিজেকে ওই ছাত্রীর স্বামী এবং নবজাতকটির বাবা বলে দাবি করেছেন। ওই ছাত্রীকে বিয়ে করার বিষয়টি দুই পরিবার জানত বলেও দাবি করেন তিনি।

ভয়ে বাচ্চা ট্রাংকে রাখা হয়
সন্তান জন্ম হওয়ার পর (শনিবার) ‘ভয় পেয়ে’ বাচ্চাকে ট্রাংকে লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন ওই ছাত্রী।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের কয়েকজন ছাত্রী জানান, হলের একটি কক্ষে ওই ছাত্রীসহ চারজন থাকতেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে তাঁরা হলে থাকেন না। আরেক ছাত্রীর ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। তিনি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাই বিষয়টি সেভাবে কারও নজরে পড়েনি।

ওই ছাত্রীর চিৎকার শুনে আশপাশের শিক্ষার্থীরা তাঁর প্রসববেদনার কথা জানতে পারেন। পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে এনাম মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করেন।

ওই ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন সকাল থেকে আমার ব্যথা শুরু হয়। রক্তপাত হতে থাকে। এতে ভয় পেয়ে যাই আমি। আমার দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। এ অবস্থায় কী করব, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। রনি মোল্লার ফোনও বন্ধ পাই। পরে সন্তান প্রসব হয়ে যায়। নবজাতকের নাড়ি ভেতর থেকে ছিঁড়ে যায়। আমি ভয় পেয়ে তাকে ট্রাংকে লুকিয়ে রাখি।’

জানতে চাইলে রনি মোল্লা বলেন, ‘ঘটনার দিন (শনিবার) সকালে আমি টিউশনিতে যাই। সে (ওই ছাত্রী) হয়তো আমাকে ফোন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ হয়নি। সন্ধ্যায় খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে পরিচয় দিলেও কেউ বিশ্বাস করেনি।’

সারা দিন মুঠোফোন বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে রনি মোল্লা বলেন, ‘আমার ফোনটাতে সমস্যা আছে। চার্জ থাকে না। তাই বেশির ভাগ সময় ফোনটা বন্ধ থাকে।’

ওই ছাত্রীর মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিয়ের আগে তারা আমাকে জানিয়েছিল। পরে আমরা মেনে নিই।’

ছাত্রীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ে বারবার বলছে, সে বাচ্চাটিকে মেরে ফেলতে চায়নি। সে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কী করতে হবে, বুঝতে পারেনি। তাই এ রকম করেছে।’

দুই বছর আগে বিয়ে
রনি মোল্লার কয়েকজন সহপাঠী বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়া ছাত্রী ও রনি মোল্লার বাড়ি পাবনায়। তাঁরা দুজন একই কলেজ (পাবনার শহীদ বুলবুল কলেজ) থেকে পড়াশোনা করেছেন। কলেজে পড়ার সময় থেকেই দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পর তাঁকে বিয়ে করেন রনি মোল্লা।

রনি মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওর (ওই ছাত্রী) মাকে জানিয়ে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল আমরা বিয়ে করি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়াশোনা করতে থাকি। বিষয়টি আমার ঘনিষ্ঠজনেরা জানত।’

যোগাযোগ করা হলে রনি মোল্লার বাবা রশিদ মোল্লা বলেন, ‘দেড় বছর আগে শুনেছিলাম, আমার ছেলে আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে। প্রথমে মন খারাপ হলেও পরে মেনে নিই। বউকে বাড়ি নিয়ে আসতেও বলি। ছেলে কেন যেন কখনো মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেনি।’

সন্তান জন্ম দেওয়া ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে রনি মোল্লার স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিবাহিত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেভাবে কাউকে জানানো হয়নি। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর ডাক্তার দেখিয়েছি কয়েকবার। ডাক্তার বলেছিলেন, ২০ মার্চ বাচ্চা ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ।’

নবজাতকের মরদেহ হস্তান্তর
গতকাল দুপুরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকের মরদেহ ওই ছাত্রীর বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বাচ্চা জন্ম দেওয়া ওই ছাত্রী সুস্থ আছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সকালে সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের উপস্থিতিতে নবজাতকের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ওই ছাত্রীর বাবা নবজাতকের নানার পরিচয়ে স্বাক্ষর করে মরদেহ গ্রহণ করেন।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুজিবর রহমান বলেন, মৃত্যুর সনদে নবজাতকটির ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হয়েছে বলে উল্লেখ করা করা হয়েছে। পরে ওই ছাত্রীর বাবা স্বাক্ষর করে নবজাতকের মরদেহ গ্রহণ করেন।

ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রধান রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘আমরা তদন্তের কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’

আরও পড়ুন:
মেয়েদের হলের ট্রাঙ্ক থেকে উদ্ধার নবজাতকটিকে বাঁচানো গেল না