Thank you for trying Sticky AMP!!

মাদকসেবী শিক্ষার্থীর হার বেড়েছে

হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া প্রায় ৩০ হাজার রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

২০২০ সালে ডিএনসির চারটি সরকারি কেন্দ্রে ১৪ হাজার ৯৫২ জন চিকিৎসা নেন। তবে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা কত, এ-সংক্রান্ত কোনো সমীক্ষা নেই বলে জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তরুণ মাদকসেবীদের কাছে ইয়াবার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানেও বেশি উদ্ধার হয় ইয়াবা। তবে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে হেরোইনে আসক্ত ৩৪ শতাংশ ও ইয়াবায় আসক্ত ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের অর্ধেকের বেশি হেরোইন ও ইয়াবায় আসক্ত। এর বাইরে ফেনসিডিল, গাঁজা, সিরিঞ্জের মাধ্যমে নেওয়া মাদক, মদ্য পান, ঘুমের ওষুধ সেবন এবং গুল সেবনে আসক্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে।

চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে মাদক এলএসডিসহ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পুলিশ বলছে, তাঁরা সেবনের পাশাপাশি মাদক কেনাবেচায় জড়িয়ে পড়েন। করোনার সময়ে তাঁরা কৌতূহলের বসে এলএসডি সেবন শুরু করেন। পরে নিজেরাও অনলাইনে এই কারবার শুরু করেন।

এই পাঁচ শিক্ষার্থীর একজন ছাড়া সবাই জামিনে আছেন। তাঁদের একজনের বাবা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে। মাদকের কারণে সন্তানের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। সম্মানহানির পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

ডিএনসির পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই কৌতূহল ও বন্ধুদের প্ররোচনায় প্রথমে ধূমপান করেন। ধীরে ধীরে তাঁরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তবে চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন অধিকাংশ মাদকসেবী। তিনি বলেন, সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়া অধিকাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। যাঁরা চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন, তাঁদের নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে পাঁচ বছরে (২০১৬-২০) চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। এই পাঁচ বছরে সেখানে ২ হাজার ৭৩৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চিকিৎসা নেওয়া মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের কম। তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশই কর্মক্ষম নন।

ডিএনসির তথ্যভান্ডার বলছে, বেকার মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৯ সালে দেশে মোট মাদকসেবীর মধ্যে প্রায় ৪১ শতাংশ ছিলেন বেকার। এক বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫৮ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে এই হার ছিল প্রায় ৪৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভৌগোলিকভাবে অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাদক রুট গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল এবং গোল্ডেন ক্রিসেন্টের কাছাকাছি। এ কারণে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে আছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি অরক্ষিত সীমান্তের কারণে দেশের অন্তত ২০টি জেলার ৯৫টি রুট দিয়ে মাদক আসার তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশের মাদক পরিস্থিত সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের মাদক পরিস্থিতিরও পরিবর্তন হয়েছে। মাদক এখন শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়েছে। বাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তা, কর্মক্ষেত্র, বস্তি, পার্ক, বিপণিবিতান এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত মাদক পৌঁছে গেছে। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত—সব শ্রেণির মানুষ মাদকে আসক্ত হচ্ছেন। উদ্ধারের পরিসংখ্যান এবং তথ্য বলছে, সবচেয়ে বড় বাজার এখন ঢাকা।