Thank you for trying Sticky AMP!!

মাদ্রাসার মাঠে ইটভাটা

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় তারাপুর দাখিল মাদ্রাসার মাঠে ইটভাটা তৈরি করে পোড়ানো হচ্ছে ইট। গত বুধবার তোলা ছবি l প্রথম আলো

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার তারাপুর দাখিল মাদ্রাসার মাঠের একাংশ জুড়ে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ইট পোড়ানোর ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীদের নানা শারীরিক সমস্যা হচ্ছে। অপরদিকে, ওই ভাটায় কয়লার বদলে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন মাহবুবুল হক বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিসসহ দীর্ঘমেয়াদি নানা ধরনের রোগ হতে পারে। এসব রোগ এখন শনাক্ত না হলেও পরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া এ পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিন গত বুধবার দেখা যায়, পাংশা-বাহাদুরপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে হাবাসপুর ইউনিয়নে তারাপুর দাখিল মাদ্রাসার সীমানা ঘেঁষে রয়েছে এএমবি ব্রিকস ইটভাটা। ভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মাঠের একটি অংশ জুড়ে কাঁচা ইট সাজানো। ভাটা থেকে বাটাহাম্বা ও নছিমন দিয়ে ইট নিয়ে যাচ্ছে লোকজন। আর ইট নিয়ে যাওয়ার সময় উচ্চ শব্দের পাশাপাশি ধুলায় ভরে যাচ্ছে চারপাশ। এ পরিবেশের মধ্যেই পড়াশোনা করছে শিক্ষার্থীরা।
মাদ্রাসার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে তারাপুর দাখিল মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। বর্তমানে মাদ্রাসায় ২৭০ জন শিক্ষার্থী ও ১৬ জন শিক্ষক আছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট জমির পরিমাণ ১ একর ২১ শতাংশ। বিদ্যালয়ের ১৫ শতাংশ জমিতে ইট তৈরি করা হচ্ছে।
সুরজ আলী খান, আহসান হাবীবসহ মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থী বলে, মাঠে ইট তৈরির কারণে তাদের খেলার মাঠটি অনেক ছোট হয়ে গেছে। তারা ঠিকমতো খেলাধুলা করতে পারে না। বর্ষার সময় পানি জমে ইটভাটা বন্ধ থাকে। কিন্তু তখনো এ মাঠ পুরোটা ব্যবহার করা যায় না। আর ইট তৈরির কারণে এখানে অনেক ধুলা ওড়ে। ফলে অনেকের কাশি বা শ্বাসকষ্ট হয়।
শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলে, ইট পোড়ানোর সময় অনেক গন্ধ ও ধোঁয়া বের হয়। এতে তাদের অনেক কষ্ট হয়। সেই সঙ্গে এখানে অনেক গাড়ি ও লোকজন আসা-যাওয়া করে। এতে অনেক শব্দ হয়। তখন তারা পড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না।
মাদ্রাসার সুপার আবদুল কাদের বলেন, ইটভাটার কাছে মাদ্রাসার কিছু জমি অনেক আগে ইজারা দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এক দাতার কাছ থেকে কিছু অনুদানের আশ্বাস পেয়েছে। টাকা হাতে পেলে তাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাচীর নির্মাণ করবেন। তবে মাদ্রাসার পাশে ইটভাটা করার বিষয়ে তাঁরা বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছেন।
ইটভাটার মালিক রবিউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘জমির জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত টাকা দিই। তবে আমরা ইটভাটাটি সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছি।’ ভাটায় কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায় কিছুটা মন্দা চলায় এবার কয়লা আনা হয়নি।
মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, ইটভাটার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সমস্যা হলেও ভাটা সরাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম খান বলেন, তিনি মাদ্রাসার পাশে ইটভাটা থাকার বিষয়টি জানতে পেরেছেন। কিন্তু মাদ্রাসার মাঠের জমি ইজারা নিয়ে ইট তৈরি করার বিষয়টি জানা ছিল না। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সায়েফুল্যা তালুকদার বলেন, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো বেআইনি। শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।