Thank you for trying Sticky AMP!!

মানব পাচারের একটি চক্রের হোতা গ্রেপ্তার

মনির হোসেন হাওলাদার ও সেলিম শিকদার। ছবি: সংগৃহীত

লিবিয়ার মিজদাহ শহরে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা ও আরও ১১ জন আহতের ঘটনায় মতিঝিল থানায় করা মামলার প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গত বুধবার রাতে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতির তাদের সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।

পুলিশ বলেছে, গ্রেপ্তার মনির হোসেন হাওলাদার (২৬) এজাহারভুক্ত প্রধান ও সেলিম শিকদার (৩৫) ২ নম্বর আসামি। মনির মানব পাচার করা একটি চক্রের মূল হোতা।

গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে পাচারকারীদের হাতে জিম্মি অবস্থায় গুলিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত হন। তখন আরও ১১ বাংলাদেশি আহত হন। ওই ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ২৬ টি মামলা করা হয়। এরপর দেশে থাকা মানব পাচারকারীদের ধরতে ১ জুন থেকে ডিএমপির পাশাপাশি, ডিবি, র‌্যাব, সিআইডি ও পিবিআই বিশেষ অভিযান শুরু করে।

মতিঝিল থানায় মানবপাচার ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে হওয়া ২৬ মামলায় এখন পর্যন্ত ৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধান আসামি মনির হোসেন ও ২ নম্বর আসামি সেলিম সিকদারসহ মতিঝিল থানায় আরও ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ নিয়ে ওই মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। মনির ও সেলিমকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এর আগে গ্রেপ্তার চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ডিবির কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, রিমান্ডে থেকে দুজন ও আগে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মানবপাচারের বিশদ বর্ণনা দেন। জিজ্ঞাসাবাদে মনির ও সেলিম ডিবিকে বলেছেন, তারা তাদের সহযোগীদের নিয়ে শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফেনি ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সহজ সরল লোকদের টার্গেট করে ভালো বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের পাসপোর্ট ও ছবি সংগ্রহ করে ঢাকায় দালাল কবির ও শরিফের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। লিবিয়ায় পাচারের পর দালালেরা তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা আদায় করতেন। পরে মনির, সেলিম, কবির ও শরিফ ভাগ করে নিতেন। চক্রের হোতা মনির হোসেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তিনি চতুর ও ধূর্ত প্রকৃতির।

২০১০ সালে মনির দালাল শরিফ ও কবিরের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান। এবং সেখানের পুলিশের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সেখানে দালাল শরিফ ও কবিরের পরিচালিত ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মনির বাংলাদেশ থেকে শতাধিক শ্রমিক নিয়ে যান। মনির ও তার সহযোগীরা শ্রমিকদের তাদের বন্দীশালায় আটকে মারধর করতেন এবং নির্যাতিত শ্রমিকদের সেই ভিডিও বাংলাদেশে অবস্থানরত স্বজনদের তাদের দেখিয়ে অন্তত ৫০ জনের কাছ থেকে দুই লাখ করে আদায় করেন। পরে মনির লিবিয়ায় অবস্থানরত দালালদের মাধ্যমে সেখানের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে হাত করে ৫০ শ্রমিককে অবৈধভাবে কাঠের বা ফাইবার বোটে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পাঠায়। কিন্তু পথিমধ্যে তাদের অনেককেই আটক হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে। আবার বোট ডুবে অনেকেই সাগরে মারা গেছেন।