Thank you for trying Sticky AMP!!

মানব পাচার রোধে অগ্রগতি নেই : মার্কিন প্রতিবেদন

মানব পাচার রোধে দেশে সরকারের প্রচেষ্টা উল্লেখ করার মতো। এরপরও এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। মানব পাচার নির্মূলে পৌঁছানো যায়নি ন্যূনতম মানে।

বৈশ্বিক মানব পাচার পরিস্থিতি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। ‘ট্রাফিকিং ইন পারসনস রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ধাপের নজরদারির তালিকায় রাখা হয়েছে। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো একই তালিকায় রইল বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব পাচার বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, পাচারকারীদের বিচারের আওতায় আনা, শিশু পাচারের অভিযোগে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং রোহিঙ্গা পাচারের অভিযোগে তদন্ত অব্যাহত রাখা। তবে ২০১৮ সালের মানব পাচারবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের প্রচেষ্টা ওই বছরের তুলনায় জোরদার হতে দেখা যায়নি। সরকার মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে পেরেছে খুব কম সংখ্যায় এবং যাদের চিহ্নিত করেছে তাদের মধ্যেও অনেক কমসংখ্যক ব্যক্তিকে সেবা দিতে পেরেছে।

প্রতিবেদনে আগের মতো এবারও দেশগুলোর পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে তিনটি ধাপে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইনের (টিভিপিএ)’ বিষয়গুলোকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ধাপগুলো তৈরি করা হয়েছে। মানব পাচার বন্ধে যেসব দেশ টিভিপিএর ন্যূনতম মানদণ্ড অর্জন করতে পেরেছে, সেগুলোকে প্রথম ধাপে রাখা হয়েছে। যেসব দেশ ন্যূনতম মানদণ্ড অর্জন করতে পারেনি কিন্তু প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্যভাবে, সেগুলোকে রাখা হয়েছে দ্বিতীয় ধাপে। দ্বিতীয় ধাপের একটি উপধাপ আছে। যেসব দেশ ন্যূনতম মানদণ্ড অর্জন করতে পারেনি, পাচার বন্ধে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পাচারের হার বাড়ছে এবং পাচার বন্ধে নেওয়া পদক্ষেপ জোরদারের প্রমাণ দিতে পারেনি, সেগুলোকে দ্বিতীয় ধাপের এই উপধাপে অর্থাৎ নজরদারির তালিকায় রাখা হয়েছে। আর যেসব দেশ টিভিপিএর ন্যূনতম মানদণ্ডও অর্জন করতে পারেনি, আবার পাচার বন্ধে উল্লেখযোগ্য চেষ্টাও চালাচ্ছে না, সেগুলোকে রাখা হয়েছে শেষ ধাপে।

>

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে টানা তৃতীয়বারের মতো নজরদারির তালিকায় বাংলাদেশ
২০১৮ সালের প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের প্রচেষ্টা ওই বছরের তুলনায় জোরদার হতে দেখা যায়নি

প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়, মানব পাচারের সমস্যা যত প্রকট, সেই তুলনায় তদন্ত ও বিচার যে অপর্যাপ্ত তা স্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা জোরপূর্বক শ্রম ও মানব পাচারের শিকার হচ্ছে বলে বিশ্বাসযোগ্য কমপক্ষে ১০০টি অভিযোগ পাওয়া গেলেও সরকার এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত বা বিচারের কথা জানাতে পারেনি।

প্রতিবেদনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, বাংলাদেশে মানব পাচারের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা এখনো গুরুতর একটি সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। কিন্তু সরকার এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানায়নি। শুধু তা-ই নয়, বিদেশে কর্মী নেওয়ার অবৈধ এজেন্টদের চিহ্নিত করতেও সেভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বাংলাদেশে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক একটি সংগঠনের তথ্যমতে, প্রতি বছর সাত লাখের বেশি বাংলাদেশি অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমায়। তাদের প্রায় সবাই মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।

প্রতিবেদনে কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মানব পাচারের ঘটনাগুলোয় বিচার জোরদার করা। বিশেষ করে, পাচারের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা। নিবন্ধনপ্রাপ্ত নিয়োগকারীরা প্রবাসে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ফি নেয়, তা বন্ধ করে নিয়োগকর্তার কাছ থেকেই এই ফি আদায় করার পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। রোহিঙ্গা পাচার প্রতিরোধে তাদের চলাচলের স্বাধীনতা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।