Thank you for trying Sticky AMP!!

মামার টাকা হাতিয়ে নিতেই ফাঁদা হয় ছিনতাইয়ের গল্প

কথিত ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন। আজ সোমবার সকালে সিলেট কোতোয়ালি থানায়। ছবি: প্রথম আলো

সিলেটে একটি ব্যাংকের সামনে থেকে ‘আউকা’ (আসুন) বলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে ‘ছিনতাইয়ের শিকার’ ওই ব্যক্তিও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। মূলত ব্যাংক থেকে তোলা মামার টাকা হাতিয়ে নিতেই ছিনতাইয়ের এই ঘটনা সাজিয়েছিলেন আবদুল হক (২২) নামের ওই ব্যক্তি।

গতকাল রোববার দুপুরে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় সাজানো ওই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। সিলেট কোতোয়ালি থানার একটি দল কথিত ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০ ঘণ্টার মাথায় জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার ও ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার করেছে।

আজ সোমবার সকালে ‘ছিনতাইয়ের শিকার’ ব্যক্তিকে প্রধান আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজনকে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলায় আবদুল্লাহ আল সাদী (১৯) ও কামরান মিয়া (২০) নামের অপর দুই আসামি পলাতক।

মহানগর পুলিশের ‘মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিস’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, কথিত ছিনতাইয়ের শিকার আবদুল হকের (২২) সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাশেদ (২০) নামের এক যুবককে। দুজনই মদিনা মার্কেটের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা। পলাতক এক ছিনতাইকারীর বাসা থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। পরে আবদুল হকের বাসা থেকে আরও ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় রূপালী ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বের হওয়ার সময় রোববার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে কথিত ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটেছিল বলে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। আবদুল হক জানিয়েছিলেন, তাঁর আত্মীয় এক প্রবাসীর ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিজের কাছে রেখেছিলেন ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বাকি ৫১ হাজার টাকা রেখেছিলেন তাঁর সঙ্গে থাকা ছোট ভাইয়ের কাছে। ব্যাংক থেকে বের হওয়ার সময় তিনজন ছিনতাইকারী তাঁকে ‘আউকা’ বলে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে চা-বাগানের নির্জন রাস্তায় নিয়ে টাকা ছিনিয়ে পালায়। তিনজন ছিনতাইকারীর মুখে মাস্ক থাকায় তিনি কাউকে চিনতে পারেননি।

পুলিশ জানায়, ব্যস্ত এলাকা ও ব্যাংকের সামনে ভরদুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনে পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনাটি পর্যবেক্ষণে নামে। ঘটনাস্থলের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে প্রথম দফা সন্দেহ হয় পুলিশের। বৃহত্তর মাদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির কয়েকজন নেতার মাধ্যমে আবদুল হককে থানায় নিয়ে অভিযোগ দিতে বলা হয়। এ সময় আবদুল হক বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলে পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। একপর্যায়ে আবদুল হক ছিনতাইকারীদের চিনেছেন বলে জানালে রোববার রাত প্রায় ১০টার দিকে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালানো হয়।

মহানগর পুলিশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কোতোয়ালি থানার দুটো দল পৃথক অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী দলের সঙ্গে থাকা রাশেদকে আটক করে। পরে রাশেদের বাসা থেকে ছিনতাই হওয়া ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ব্যবহৃত একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। আর আবদুল হকের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁর ছোট ভাইয়ের কাছে রাখা ৫১ হাজার টাকা। গ্রেপ্তারের পর আবদুল হক ও রাশেদ জানিয়েছেন যে প্রবাসীর টাকা হাতিয়ে নিতেই ছিনতাই নাটক সাজানো হয়েছিল। আবদুল হকই তিনজন ছিনতাইকারীকে নিয়ে পুরো ঘটনাটি সাজিয়েছিলেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল মুসা প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুল হক মারধরের শিকার হয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। তাঁর হাতে ক্ষুরের ক্ষত দেখিয়েছিলেন, সেটি তিনি ব্লেড দিয়ে নিজেই করেছিলেন বলে স্বীকার করেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ব্যাংক থেকে যাঁর টাকা উত্তোলন করা হচ্ছিল, সম্পর্কে আবদুল হকের মামা হন তিনি। এ ঘটনায় টাকার মালিকের পক্ষে রিদানুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ছিনতাইয়ে জড়িত চারজনকে আসামি করা হয়েছে। পলাতক আবদুল্লাহ আল সাদী ও কামরান মিয়াকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন:

ব্যাংকের সামনে ‘আউকা’ বলে ঘিরে ধরে টাকা ছিনতাই