Thank you for trying Sticky AMP!!

মালামাল ওঠানো-নামানোর ইজারা নিয়ে অবৈধ ব্যবসা

বালু এনে রাখা হচ্ছে নদীর পাড়ে। বুধবার নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকায়। প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে শীতলক্ষ্যা নদীর একটি অংশ মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য ইজারা নিয়ে সেখানে অবৈধ বালুর ব্যবসা করা হচ্ছে। এই ব্যবসার জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছ থেকে কোনো অনুমোদন (লাইসেন্স) নেওয়া হয়নি।

গত সোমবার সকালে কাঁচপুর সেতুর পাশে শিমরাইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর পশ্চিম পাড়ের উত্তর পাশে (বাঁ দিক) নদীর আধা কিলোমিটারের বেশি অংশে বালুর ব্যবসা চলছে। কাঁচপুর সেতুর পাশে আরেকটি সেতুর নির্মাণকাজের সময় সেতু থেকে নদীর তীরের প্রায় ৫০০ ফুট অংশে টিনের বেড়া দিয়ে ‘সংরক্ষিত’ করা হয়েছিল। এখন টিন খোলা হয়েছে। ওই অংশ বাদ রেখে বিআইডব্লিউটিএ ৪১ লাখ টাকায় ঘাট ইজারা দিয়েছে। সেখানে জেটি করা হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে এর ইজারা নেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। এর আগে ইজারা নিয়েছিলেন তাঁর ছোট ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা জহিরুল ইসলাম। ইজারার শর্ত অনুযায়ী জেটিতে শুধু মালামাল ওঠানো-নামানোর কথা। সে জন্য জেটিও তৈরি হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল, মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজে হাতে গোনা কয়েকজন শ্রমিক নিয়োজিত। অনেক বেশি শ্রমিক ব্যস্ত নদীর জায়গায় রাখা বালু সামলানোর কাজে। ১ নম্বর জেটির কাছে নোঙর করা মালবাহী কার্গো থেকে নামানো হচ্ছে গমের বস্তা। সেই গম নামানোয় ব্যস্ত কিছু শ্রমিক।

২০১৩ সালে কাঁচপুর থেকে ডেমরা ঘাট পর্যন্ত নদীর পাড়ে হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে) তৈরি করে বিআইডব্লিউটিএ। এই পথ থেকে আরও ১২০ ফুট দূরে সীমানা খুঁটি। হাইকোর্টের রায় (২০০৯ সালে) অনুসারে নদীর ঢাল থেকে দেড় শ ফুট ওপরে নদীর জায়গা। দেখা গেল, সীমানার ভেতরেই নদীর জায়গায় বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা বা বালু বিক্রির ‘গদি’ গড়ে উঠেছে। বালু নেওয়ার জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি ট্রাক। এমনকি ওয়াকওয়ের কিছু অংশেও বালু রাখা। একটু পরপর লোহার মোটা পাইপ নদীতে নেওয়া হচ্ছে বালু তোলার জন্য, ফলে কোনো পথচারীর পক্ষে নির্বিঘ্নে হাঁটা সম্ভব হচ্ছে না। তিনজন পথচারী হাঁটতে গিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তাঁদের মধ্যে আবু জাফর নামের একজন বলেন, এই পথ ধরে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু পর্যন্ত যাওয়া যায়। কিন্তু চলতে গেলে সমস্যা হয়।

জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ৪১ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। মালামাল ওঠানো-নামানোর ওপর নির্ভর করলে হবে না। কিছু জায়গা খালি আছে, সেখানে বালু রেখেছেন। সীমানা খুঁটির ভেতরে তাঁর গদি আছে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি আছে। কিন্তু সেটি সীমানা খুঁটির বাইরে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন বলেন, গদি আছে তিনটি। সব কটিই সীমানা খুঁটির ভেতরে।

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ বন্দরের যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী প্রথম আলোকে বলেন, মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য এখানে জেটি ইজারা দেওয়া হলেও বালু বিক্রির গদিগুলোকে কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, গত বছর এখানে অভিযান চালিয়ে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। আবার গড়ে উঠেছে। বিআইডব্লিউটিএর কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এখানে নজরুল ইসলামের খুব বেশি প্রভাব। তাঁর ভয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা যায় না। নজরুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি কাউকে কখনো ভয় দেখাননি।

২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে সময় স্থানীয় সাংসদ গিয়াসউদ্দিন পাথর ভাঙার কারখানা তৈরি করে ব্যবসা করতেন। ২০০৯ সালের দিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এখানে বালু-পাথরের ব্যবসা শুরু করেন কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তাঁর ভাই জজ মিয়া। নূর হোসেন নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি।