Thank you for trying Sticky AMP!!

মালামাল না দিয়েই বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার

পরস্পর যোগসাজশে মালামাল সরবরাহ না করেই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ৬ কোটি ৬ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়েছিলেন ঠিকাদার। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে এ ঘটনা ঘটে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এর প্রমাণ পাওয়ায় হাসপাতালটির সাবেক তত্ত্বাবধায়ক, ঠিকাদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংস্থাটি।

প্রথম আলোকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সংস্থার উপসহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় আসামি করা হয়েছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক (বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওএসডি) ডা. শেখ শাহজাহান আলী, ঠিকাদার ও বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকার, জাহেরের বাবা মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আবদুস সাত্তার সরকার, জাহেরের ছেলে ও মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের আরেক মালিক আহসান হাবীব এবং জাহেরের ভগ্নিপতি ও ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের মালিক আসাদুর রহমানকে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা একে অন্যের সহায়তায় অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও অপরাধমূলক অসদাচরণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। পিকচার আরকাইভিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেমস (প্যাকস) নামে সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট মালামাল সরবরাহ না করে ভুয়া বিল জমা দিয়ে ৬ কোটি ৬ লাখ ৯৯ টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

অভিযোগ অনুসন্ধানের সময় কাগজপত্র পর্যালোচনায় দুদক দেখেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার যৌক্তিক কোনো কারণ না থাকলেও পিকচার আরকাইভিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেমস নামে সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ শাহজাহান আলী বিধিবহির্ভূতভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই বাজারদর কমিটি, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ও সার্ভে কমিটি গঠন করেন। ২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করে পরদিন দৈনিক আমার সংবাদ ও দ্য নিউজ টুডে পত্রিকায় প্রকাশসহ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

দরপত্র আহ্বানের পর জাহের উদ্দিন সরকারের প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক কোম্পানিসহ তাঁর বাবা, ছেলে ও ভগ্নিপতির নামের কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়। দরপত্র মূল্যায়ন শেষে জাহের উদ্দিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়।

কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি মালামাল সরবরাহ না করেই তা সরবরাহ দেখিয়ে সাত কোটি টাকার বিল জমা দেয়। বিলটি পাস করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শেখ শাহজাহান আলী। বিল থেকে মূল্য সংযোজন কর ও আয়কর বাদ দিয়ে ৬ কোটি ৬ লাখ ৯৯ টাকা পরিশোধ করা হয়।

পরে দুদকের প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত একটি দল সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরেজমিন পরিদর্শন করে সফটওয়্যারসহ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, দরপত্র দাখিল করা তিনটি প্রতিষ্ঠানই জাহের উদ্দিন সরকারের। তাঁরা সিন্ডিকেট করে দরপত্র জমা দিয়েছেন। হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেন। নিয়ম ভেঙে তিনি এর কার্যাদেশ দেন। মালামাল গ্রহণ করা ছাড়াই ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করে দেন।