Thank you for trying Sticky AMP!!

মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর বাজারে

খেজুরের আড়তে র‌্যাবের অভিযান। গতকাল বাদামতলীতে। ছবি: প্রথম আলো

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা। পুরান ঢাকার বাদামতলীতে খেজুরের একটি গুদামে অভিযানে যায় র‍্যাব। উপস্থিতি টের পেয়ে গুদামের মালিক ফটকে তালা ঝুলিয়ে সটকে পড়েন। পরে দরজা ভেঙে গুদামে ঢোকার পর দেখা গেল, সেখানে রাখা সব খেজুরই মেয়াদোত্তীর্ণ। কিছু কিছু খেজুরের প্যাকেট খোলার পর বের হচ্ছে পোকা। এসব খেজুর ব্যবহার করে নতুন করে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে।

পরে গুদামের মালিক মো. রুবেল হোসেনের দোকান মা এন্টারপ্রাইজে অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখানে দেখা গেল কিছু খেজুরের প্যাকেটের গায়ে প্যাকেজিংয়ের তারিখ উল্লেখ করা ২০১৯ সালের ১০ মে, অথচ গতকাল ছিল ৭ মে। এ ছাড়া এসব খেজুরের প্যাকেটে ব্যবহার করা হয়েছে ভুয়া কিউআর কোড।

এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর বিক্রির দায়ে মা এন্টারপ্রাইজের মালিক রুবেল হোসেনকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং তাঁর দোকান ও গুদামের সব খেজুর জব্দ করা হয়।

র‍্যাবের নির্বাহী হাকিম সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, এক-দুই বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন খেজুরও পাওয়া গেছে গুদামটিতে। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব খেজুর নতুন করে প্যাকেটজাত করে দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে। নতুন করে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া হয়েছে ২০২০ সালের ১ জুলাই।

অভিযানে থাকা র‌্যাবের ফরেনসিক ল্যাবের সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক রাজীব বণিক বলেন, যে এসব খেজুর খাবে, তার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে।

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গতকাল বাদামতলীর শাহজাদা মিয়া লেনে (খেজুরপট্টি) এই অভিযান চালানো হয়। এতে বিএসটিআইএর প্রতিনিধিরাও ছিলেন।

গতকালের অভিযানে দেখা গেছে, অনেক বিক্রেতা বিদেশের নামকরা ব্র্যান্ডের মোড়ক তৈরি করে তাতে মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছেন।

মা এন্টারপ্রাইজের পর সালমান এন্টারপ্রাইজ নামের আরেকটি গুদামে অভিযান চালানো হয়। সেখানেও মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর পাওয়া যায়।

গুদামের মালিক আবদুর রহমানের দাবি, কেনার সময় খেজুরের মান কেমন, তা না দেখেই কিনেছেন তিনি। ওই গুদামের কোনো খেজুরই খাবারযোগ্য নয়, তবু কেন এসব খেজুর কিনেছেন—এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি তিনি।

কোথা থেকে এসব খেজুর কিনেছেন, নির্বাহী হাকিমের এমন প্রশ্নের জবাবে গুদামের মালিক জানান, নারায়ণগঞ্জের দুটি কোল্ড স্টোরেজ থেকে তিনি এসব খেজুর কিনেছেন। নির্বাহী হাকিম জানান, যেখান থেকে এসব খেজুর কেনা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকেও মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর রাখার দায়ে বড় অঙ্কের অর্থ জরিমানা করা হয়েছিল।

এরপর মেসার্স পূবালী ফার্ম ও মেসার্স হাজী মো. হারুন রশিদ ব্যাপারী নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। সেখানেও মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর খুঁজে পাওয়া যায়। পূবালী ফার্মে গুড় মেশানোর একটি পাত্র খুঁজে পাওয়া গেছে। র‍্যাবের কর্মকর্তাদের ধারণা, মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর চকচকে করার জন্য গুড় মেশানো হতে পারে। পরে পূবালী ফার্মকে ৫ লাখ টাকা ও মেসার্স হাজী মো. হারুন রশিদ ব্যাপারীকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযান সম্পর্কে সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক বছর আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে এমন ২২ টন খেজুর আমরা জব্দ করেছি। বিদেশি নামকরা ব্র্যান্ডের অন্তত ৪ হাজার কার্টন তৈরি করে সেখানে নতুন করে দিন-তারিখ বসিয়ে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

ভোক্তাদের উদ্দেশে এই নির্বাহী হাকিম বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাজারে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ খেজুর ভালো। ছোটখাটো যে সমস্যা রয়ে গেছে, সে বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। আমরা মাঠে আছি, দেখছি কারা এসব করছে।’