রাজধানীতে তৎপর ছিনতাইকারীরা
ঈদ সামনে রেখে ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। চার দিনের মধ্যে রাজধানীতে চারটি ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়েছে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী ও ডাকাত দলের সদস্যরা। মারধরের শিকার হয়েছেন কয়েকজন। এসব ঘটনায় থানায় চারটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়ে আটজন আসামি কারাগারে আছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্য, ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
যেভাবে ছিনতাই
১৮ বছর বয়সী তরুণ সাইফ আহম্মেদ গত মঙ্গলবার রাতে হাতিরঝিল এলাকায় ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়েন। তাঁর কাছে থাকা মুঠোফোন ও টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সাইফ বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় গতকাল বুধবার মামলা করেছেন।
এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানার পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার আদালতে পাঠিয়েছে। আদালত তাদের প্রত্যেককে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
হাতিরঝিল থানার পুলিশ এক প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানিয়েছে, সাইফ তাঁর বন্ধু আরিফকে নিয়ে হাতিরঝিলের বাসায় ফিরছিলেন। তখন রাত ১১টা। তাঁরা যখন হাতিরঝিলের মধুবাগে আসেন, তখন তিনজন ছিনতাইকারী তাঁদের গতিরোধ করে। আসামি মিলন চাকু হাতে নিয়ে সাইফকে বলেন, ‘যা আছে দিয়ে দে, নইলে প্রাণে মেরে ফেলব। অন্য দুজন সজীব ও রিপন রবিদাস বলেন, যা আছে তাড়াতাড়ি দিয়ে দে।’ তখন ছিনতাইকারীরা সাইফের ৩৫ হাজার টাকা দামের স্মার্টফোন এবং এক হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয় পাল আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার পর সাইফ এবং তাঁর বন্ধু চিৎকার দেন। তখন পথচারীদের সহায়তায় তিনজন ছিনতাইকারীকে আটক করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে মুঠোফোন এবং টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
হাতিরঝিলের ছিনতাইয়ের এই ঘটনার দুই দিন আগে (২৬ মে) শাহবাগ থানার হাইকোর্ট মাজারের কাছে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সামনে আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় রংপুরের ব্যবসায়ী জিয়ারত হোসেন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় সেদিন মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, তাঁর গাড়ির চালক কামাল রংপুরের তারাগঞ্জ থেকে ট্রাকে করে লিচু নিয়ে যাচ্ছিলেন নোয়াখালীতে। সেদিন ভোররাত চারটার দিকে তাঁরা হাইকোর্ট মাজার মোড় পার হয়ে যখন বঙ্গবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন ডাকাত দলের ছয় থেকে সাতজন সদস্য পিকঅ্যাপ ভ্যান সামনে নিয়ে গতিরোধ করে। ট্রাকের অপর চালক নাসিরের গলায় ধারালো অস্ত্র ধরে তাঁর মুঠোফোন, নগদ সাড়ে আট হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ট্রাকচালক কামালকে এলোপাতাড়ি মারপিট করার সময় নাসির সেখান থেকে পালিয়ে যান। চালক কামালের হাত-পা বেঁধে তাঁর মুঠোফোন, নগদ তিন হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। লিচুভর্তি ট্রাক নিয়ে দুই ডাকাত পালিয়ে যায়।
এই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাগ থানার পুলিশ। ২৭ মে তাঁদের ঢাকার আদালতে তোলে পুলিশ। তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। ওই দুজন হলেন হৃদয় শেখ ও মুকুল।
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অমল কৃষ্ণ দে ঢাকার আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, ট্রাকটি রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় জব্দ করা হয়েছে। তখন পুলিশ দেখে সন্দেহভাজন দুই আসামি পালানোর চেষ্টা করেন। তখন তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ট্রাকের মালিক জিয়ারত হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ট্রাকটি এখন শাহবাগ থানায় আছে। কিন্তু ডাকতেরা যে লিচু নিয়ে যায়, তা আর উদ্ধার হয়নি।
শাহবাগের ডাকাতির এই ঘটনার এক দিন আগে (২৫ মে) হাতিরপুলে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী লিটন। তাঁর ৮৫ হাজার টাকা দামের হুয়াওয়ে মডেলের স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেয় দুজন ছিনতাইকারী।
ভুক্তভোগী লিটন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাসা ওয়ারী এলাকায়। সেদিন রাত সাড়ে ১০টায় ইস্টার্ন প্লাজা থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। তিনি হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সামনে আসার পর মোবাইল হাতে নিয়ে উবারের যানবাহন খুঁজছিলেন। তখন পেছন থেকে দুজন মোটরসাইকেল আরোহী তাঁর সামনে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল দুর্বৃত্তরা। তখন চিৎকার দেন। আশপাশের লোকজন মাহফুজুর আলম নামের ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলেন। অপরজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এ ঘটনায় ব্যবসায়ী লিটন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় ২৭ মে মামলা করেন। সেই মামলায় মাহফুজুরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সেদিন ঢাকার আদালতে পাঠায় শাহবাগ থানার পুলিশ।
আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে শাহবাগ থানার পুলিশ জানিয়েছে, আসামি মাহফুজুর একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও, শেরেবাংলা নগর ও রমনা থানায় চুরি, ছিনতাই ও অপহরণের চারটি মামলা আছে।
তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন-অর-রশীদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ী লিটনের খোয়া যাওয়া মুঠোফোনটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অপর ছিনতাইকারীই লিটনের মোবাইলটি নিয়ে সটকে পড়ে। তবে ওই ছিনতাইকারীর নাম তাঁরা জানতে পেরেছেন। নাম রাকিবুল হাসান। যেকোনো সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
২৩ মে বিকেল পাঁচটার সময় রাজধানী খিলক্ষেত থানার রাজউক ট্রেড সেন্টার এলাকায় ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আবুল এহসান ফয়সাল ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আবুল এহসান ফয়সাল বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে ফয়সাল বলেন, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সেদিন ১২ লাখ ২৫ হাজার টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে রাজউক ট্রেড সেন্টারে ঢোকার সময় দুজন ব্যক্তি তাঁর গা ঘেঁষে চলতে শুরু করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই টাকাভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে টানা দেয়। বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা তাঁকে মারধর করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে বিমানবন্দরের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। তিনি তখন ছিনতাইকারীদের পিছু পিছু দৌড়াতে থাকেন। মার্কেটের উত্তর পাশে র্যাবের একটি টিম ছিল। তাদের তিনি এ ঘটনা জানান। তখন র্যাবের টিম ধাওয়া করে রায়হান নামের এক আসামিকে আটক করতে সক্ষম হয়।
খিলক্ষেত থানার পুলিশ ঢাকার আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছেন, র্যাব-২–এর সহায়তায় আসামি আহম্মেদ মোস্তফা হাবিব ও রায়হান কবিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই টাকা নেওয়ার কথা এই দুই আসামি স্বীকার করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এম এ জাহেদ গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় এই দুই আসামি জড়িত ছিলেন, তা স্বীকার করেছেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁদের দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন। আসামিরা এখন কারাগারে।
সাম্প্রতিক সময়ের এই ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনার ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের সময় এই ধরনের অপরাধ বাড়ে। ছিনতাই, ডাকাতিসহ এই ধরনের অপরাধ রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছ। চলছে বিশেষ অভিযান।
আরও পড়ুন: সাবধান, ছিনতাইকারী সামনে!
আরও পড়ুন
-
সকাল ৯টার ট্রেন ছাড়েনি বেলা ২টায়ও, স্টেশনেই ঘুমিয়ে পড়েছেন ক্লান্ত মা-মেয়ে
-
পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত
-
সঠিক তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন করলে পূর্ণ সহায়তা দেওয়া হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
-
ঝড়বৃষ্টি হতে পারে ৬ দিন ধরে, বলছে আবহাওয়া অফিস
-
ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা